• আইন ও আদালত

    তানোরে দারোগার বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ 

      প্রতিনিধি ১০ আগস্ট ২০২৪ , ১০:৪০:১৪ প্রিন্ট সংস্করণ

    মোঃ মমিনুল ইসলাম মুন-বরেন্দ্র অঞ্চল প্রতিনিধি:

    রাজশাহীর তানোরে পুলিশের এক এসআই-এর (উপ-পরিদর্শক) বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ  ঘটনায় গত ২ আগস্ট ভিকটিমের  পিতা প্রভাষক রবিউল ইসলাম রুবেল বাদি হয়ে এসআই কাওসার আলীসহ তিনজনকে আসামি করে তানোর থানায় এজাহার করেছেন। বাদি গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, থানায় এজাহারে যেনো মামলা রেকর্ড না হয় সেই জন্য বিবাদী তদ্বিরের পাশাপাশি এজাহার তুলে নিতে তাকে নানা ভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন।এদিকে বাদির লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, এসআই কাউসার আলী সম্পর্কে তার মেয়ে জামাই এবং সে বর্তমানে উপ-পুলিশ পরিদর্শক পদে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদা রাজশাহীতে কর্মরত রয়েছেন।

    বিগত ২০২২ সালের ২৯ জুলাই এসআই কাওসার আলীর সঙ্গে তার কন্যা আনিসা ইসলাম তৃপ্তির (২০) এর ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক বিবাহ হয়। তাদের ঘরে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে যার  বয়স প্রায় ৯ মাস। কিন্তু বিবাহ পরবর্তী সময়ে জামাই এসআই কাওসার আলী যৌতুক বাবদ তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা তার কাছ থেকে নেয় এবং তারা প্রায় ৪  মাস ভালোভাবে ঘর- সংসার করে।  তারপরেও কওসার আলীর ইন্ধনে তার পিতা-মাতা তৃপ্তিকে বাবার বাড়ী থেকে যৌতুক বাবদ আরো পনের লাখ টাকা নিয়ে আসার জন্য প্রতিনিয়ত চাপ দিতে থাকে।নইলে তৃপ্তির বাবার ১০ বিঘা জমি ভোগ দখল করতে দিতে হবে এবং গ্রামে পাকা বাড়ি তৈরী করে দিতে হবে। বলে নানা ভাবে চাপ দেন।

    এদিকে তৃপ্তি ঘটনা তার পরিবারকে জানালে তার পিতা রবিউল ইসলাম তার জামাই কাওসার আলীকে নিয়ে তার পিতা-মাতার সঙ্গে আলোচনায় বসেন। সেখানেও তৃপ্তির বাবা রবিউল ইসলামকে যৌতুক হিসেবে পনের লাখ টাকা দিতে চাপ দেয়া হয়। কিন্তু রবিউল যৌতুকের এতো টাকা দিতে অসম্মতি প্রকাশ করেন। এর পর থেকেই কাওসার আলী তার স্ত্রী তৃপ্তিকে যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্ঘাতন করতে থাকে  এক পর্যায়ে তৃপ্তিকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।এসময তৃপ্তি চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। এমতাবস্থায় মেয়ের সুখ-শান্তির কথা বিবেচনা করে রবিউল ইসলাম মুন্ডুমালা পৌরসভার  ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আতাউর রহমানের উপস্থিতিতে  মেয়ের জামাই কাওসার আলীকে আট লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে প্রদান করেন। কিন্তু এক মাস পর আবার যৌতুক হিসেবে সাত লাখ টাকা নিয়ে আসতে তৃপ্তিকে চাপ দেয় জামাই কাওসার আলী। পিতার আর্থিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে তৃপ্তি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান।

    এবারো বিষয়টি নিয়ে তৃপ্তির পিতা-মাতা ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আতাউর রহমানসহ জামাই কাওসার আলীর বাড়ীতে গিয়ে তার পিতা-মাতার সঙ্গে আলোচনা করেন। কিন্তু সাত লাখ টাকা না দিলে তৃপ্তিকে বাবার বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেন। এমতাবস্থায় রবিউল ইসলাম তার মেয়েকে পুনরায় তার বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং সন্তান প্রসবের পর থেকে এখন পর্যন্ত জামাই কাওসার আলী কোন প্রকার ভরণপোষণ দেন না। এদিকে অনেক অনুরোধের পর তার মেয়েকে তার বাড়ি থেকে কাওসার আলীর  কর্মস্থল সারদা পুলিশ একডেমির ভাড়া বাড়িতে নিয়ে যায়। কিন্তু নিয়ে যাওয়ার পরে যৌতুকের দাবিতে  একইভাবে তৃপ্তির ওপর শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো কাওসার। এদিকে ঘটনা জানার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তৃপ্তির বাবা-মা সেখানে যান। কিন্তু কাওসার তার পিতা-মাতার প্ররোচনায় পড়ে তাদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করে।

    গত ২০২৪ সালের ৫মে পুলিশ একাডেমী, সারদার ভাড়া বাসা থেকে তৃপ্তিসহ তার বাবা-মাকে অপমান অপদস্থ করে বের করে দেন কাওসার। এক পর্যায়ে তারা ঘটনা মুন্ডুমালা পৌর মেয়র সাইদুর রহমানকে জানান। পরবর্তীতে বিবাদীগণ পৌর মেয়রসহ অন্যান্য গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে জানায়, তাদের ভুল হয়েছে, এমন ভুল আর হবে না কাওসার আলী তার স্ত্রী আনিসা ইসলাম তৃপ্তিকে নিয়ে পুনরায় শান্তিপূর্ন ভাবে ঘর সংসার করবে বলে জানায়। এরই ধারাবাহিকায় ১৫/০৬/২০২৪ ইং তারিখ ১নং বিবাদী ও ২ নং বিবাদী মণ্ডুমালা পৌর মেয়র সাইদুর রহমান, ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর  নাহিদ হাসান, ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান বুলবুল এবং ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর  আতাউর রহমানগণসহ আরও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গদেরকে নিয়ে আমার বাড়িতে আসে এবং বিবাদীগণ ভুল স্বীকার করে।

    গন্যমানা ব্যক্তিবর্গদের পরামর্শ ক্রমে ও মধ্যস্থতায় আমার মেয়েকে ঘর সংসার করার উদ্দেশ্যে ১নং বিবাদীর নিকট বুঝিয়ে দিলে সে তার কর্মস্থল বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী, সারদা, রাজশাহীতে তার মেয়েকে নিয়ে যায়। এর কয়েকদিন পর থেকে আবারও ১নং বিবাদী তার মেয়েকে সাত লাখ টাকা অথবা ১০ বিঘা জমি ভোগ দখল করতে দিতে হলে এবং গ্রামে পাকা বাড়ি তৈরী করে দেওয়ার জন্য বারংবার চাপ প্রয়োগ করে এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। বিষয়টি তৃপ্তি আবারো আমাদেরকে জানায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২নং ও ৩নং বিবাদীর প্ররোচনায় ১নং বিবাদী২০২৪ সালের ২৮ জুলাই তাহার কর্মস্থল পুলিশ একাডেমী, সারদা, থেকে আমার মেয়েকে আমার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

    গত ২০২৪ সালের ৩১ জুলাই সন্ধ্যায় আবার শ্বশুর বাড়ি তথা ঘটনাস্থল রাজশাহী জেলার তানোর থানাধীন সাদিপুরস্থ বিবাদীদের বসত বাড়িতে যায়। কিন্তু ৩নং বিবাদী আমার মেয়েকে কটূক্তি করতে থাকে এবং তার ছেলেকে অর্থাৎ ১নং বিবাদীকে বাড়িতে আসতে বলে। তারপর ১নং বিবাদী বাড়িতে এসে আমার মেয়েকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং আমার মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার জন্য টানা হেঁচড়া শুরু করে। তখন আমার মেয়ে বাড়ী থেকে বের হতে না চাইলে বিবাদীগণ এলোপাথারীভাবে আমার মেয়েকে মারপিট শুরু করে। ১নং বিবাদী হাসুয়া দ্বারা আমার মেয়েকে যৌতুকের দাবীতে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথা লক্ষ্য করে কোপ মারলে আমার মেয়ে তার বাম হাত দিয়া প্রতিহত করার চেষ্টা করলে তার বাম হাতের কব্জির উপরে কোপ লেগে গুরুতর জখম হয়। আঘাতের কারণে আমার মেয়ে মাটিতে গড়ে গেলে সকল বিবাদীগণ আমার মেয়ের তলপেটে এলোপাথারীভাবে লাথি মারে।

    তাছাড়াও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাতারীভাবে কিল ঘুষি মারে। তাৎক্ষণিকভারে বিষয়টি আমি জানতে পেরে দ্রুত আমি ও আমার স্ত্রী ডালিয়া রহমান এবং ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আতাউর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে আমার মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করি। এই সময় বিবাদীগণ আমার মেয়েকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে এবং আমাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। আমরা আমাদের মেয়ের জীবন রক্ষার্থে দ্রুত সিএনজি ডেকে মেয়েকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করি। চিকিৎসার কাজে ব্যস্ত থাকায় এবং আত্মীয়- স্বজনের। সহিত আলোচনা করে এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হল। এবিষয়ে জানতে চাইলে এসআই কাওসার আলী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে তার উর্ধতন কর্তৃপক্ষ সব জানেন।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ