• রাজশাহী বিভাগ

    তানোরে আওয়ামীলীগে সম্মেলন কে ঘিরে দলীয়কোন্দল ও উত্তেজনা!

      প্রতিনিধি ১৪ মার্চ ২০২২ , ৩:৪৬:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ

    মমিনুল ইসলাম মুন-বরেন্দ্র অঞ্চল প্রতিনিধি:

    রাজশাহী জেলাধীন তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অঙ্গনে নেতা-কর্মীদের মাঝে দ্বীর্ঘদিনের বিরাজমান দলীয় কোন্দল হঠাৎ করেই উত্তাপ ও উত্তেজনায় পরিণত হয়েছে।বিরাজ করছে বিস্ফোরণমূখর পরিস্থিতি। যেকোনো সময় যেকোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। চলতি মার্চ-২০২২ মাসের ২১ তারিখে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন (কাউন্সিল) হওয়ার কথা ছিল।

    কিন্তু হঠাৎ করে অজ্ঞাত কারণে তা স্থগিত করায় তৃণমূলে এসব ক্ষোভ-অসন্তোষ ও উত্তেজনার সুত্রপাত হয়েছে।
    তৃণমূলের ভাষ্য; উপজেলা আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির অথর্ব সভাপতি ও সম্পাদকের নৌকাবিরোধী অপরাজনীতি এবং সংগঠণপরিপন্থী কর্মকাণ্ড, দ্বায়ীত্বহীনতা, স্বেচ্ছাচারিতা, বেঈমানী, বিশ্বাসঘাতকতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে ভেঙ্গে পড়েছে দলের চেইন অব কমাণ্ড, সাংগঠণিক অবস্থা নাজুক, দলীয়কোন্দলও চরমে।

    সূত্র বলছে; বিগত ২০১৮ সাল থেকে সভাপতি ও সম্পাদক দলীয় কোন সভা করতে পারেননি, এমনকি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, ১৫ আগষ্ট ও ২১ আগষ্টসহ জাতীয় কোন কর্মসূচীসহ দলীয় গুরুত্ব পূর্ণ কোন সভাতে তাদের উপস্থিতি বা উদ্দ্যোগ কিছুই ছিল না। এসব কারণে দলে তাদের নীতি-নৈতিকতায় ও আদর্শিকতায় ভাটা পড়েছে।যার কারণে দলে আদর্শিক, পরীক্ষিত, ত্যাগী ও নতুনত্ব নেতৃত্ব দিতে হাইকমাণ্ডের কাছে দ্বীর্ঘদিন ধরে দ্বাবী করে আসছেন তৃণমূল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি; তিনবার উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করেও অজ্ঞাত কারণে স্থগিত করা হয়েছিল, এবার এদিয়ে তা চারবার স্থগিত করা হলো।
    এদিকে সম্মেলন স্থগিতের খবর ছড়িয়ে পড়লে তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।

    তাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তারা সভাপতি গোলাম রাব্বানী এবং সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বেঈমান-বিশ্বাসঘাতক আঙ্খ্যা দিয়ে তাদের মেনে নিতে পারছেন না, আবার নতুন নেতৃত্ব পাচ্ছেন না, এনিয়েও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এনিয়ে সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা ক্ষোভ বিরাজ করছে।তৃণমূলের একটাই দ্বাবী; “যেকোনো মূল্যে সম্মেলন চাই।”স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ভাষ্য; সামনে সাধারণ নির্বাচন এখনিই সম্মেলনের উপযুক্ত সময়, যথা সময়ে সম্মেলন করতে ব্যর্থ হলে আগামীতে দলকে চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। এছাড়াও কমিটি গঠনের দ্বায়ীত্ব সংশ্লিষ্ট এমপির উপর ন্যস্ত করা উচিৎ বলে মনে করেন তৃণমূল।

    কারণ স্থানীয় রাজনীতি করবেন স্থানীয় এমপি, তাই কাকে কোন দ্বায়ীত্বে রাখা যায়- সেটা তিনিই ভাল বোঝেন। কাজেই কেন্দ্র বা জেলার নেতারা কমিটি করলে সেক্ষেত্রে ভুল হবার সম্ভবনা থাকে অনেক বেশী।কেন্দ্রীয় ঘোষণা অনুযায়ী; চলতি মার্চের মধ্যেই এই উপজেলায় নতুন কমিটি আসবে বলে আশাবাদী ছিলেন তৃণমূল। তার পরিপ্রেক্ষিতে পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা তৃণমূলে না গিয়ে দলে-দলে ছুটছিলেন কেন্দ্রের দিকে। অনেকেই ব্যাগ ভরে টাকাও নিয়ে যাচ্ছিলেন সঙ্গে।তৃণমূল নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন এসব তথ্য।

    তৃণমূল নেতা-কর্মীরা আরও জানান; আগে দলের নতুন কমিটি গঠনে তৃণমূল নেতা-কর্মীরাই ছিলেন ‘নেতা নির্বাচনের মূল কারিগর।’ কিন্তু এখন তাদের মতামতও নেওয়া হচ্ছে না। কয়েক বছর থেকে দ্বায়ীত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা শর্টকাট ব্যবস্থায় সম্মেলন ডেকে ওপর থেকে কমিটি চাপিয়ে দিচ্ছেন। ফলে পর্যাপ্ত টাকা-পয়সা দিয়ে এবং কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের ম্যানেজ করে অতি সুবিধাবাদী ও হাইব্রিডরাই চলে আসছেন বিভিন্ন কমিটির নেতৃত্বে।কমিটি গঠণের কাজও এগিয়ে চলেছে সেই শর্টকাট ব্যবস্থাতেই। তাদের অভিযোগ; হাইব্রিডদের দাপটে অনেকদিন ধরে রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় কোণঠাসা হয়ে আছেন দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা।

    এবিষয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক “আসাদুজ্জামান আসাদ” বলেছেন; সম্মেলনের মাধ্যমে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি গঠনের পর উপজেলা কাউন্সিল করা উচিত ছিল। আমি দ্বায়ীত্বে থাকাকালে প্রতিটি ইউনিয়নেই কমিটি করা হয়েছিল কাউন্সিলের মাধ্যমে। এবং কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে উপজেলা কমিটি করা হয়েছিল।কিন্তু এখন উপজেলা কমিটিগুলোর নেতৃত্ব ঠিক করছেন- কেন্দ্রীয় নেতারা। গুরুত্বপূর্ণ কমিটিগুলোতে এভাবে উপর থেকে নেতা বসিয়ে দিলে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা হতাশায় ডুববে। আবার পদ বণ্টনে মোটা টাকার লেনদেনেরও আভাস পাচ্ছি। এভাবে পদ ও কমিটি বেচা-কেনা হলে দলের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।।

    এবিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন; কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সম্মেলনের মাধ্যমে উপজেলা কমিটি গঠিত করা হবে। দলকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন; তাদেরই দ্বায়ীত্ব দেওয়া হবে। ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন ছাড়াই উপজেলা কমিটি গঠন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন;; করোনা মহামারির কারণে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন/পৌরসভা কমিটিগুলো গঠণ করা সম্ভব হয়নি। উপজেলা কমিটি গঠণ হয়ে গেলে- পরে নতুন কমিটির নেতৃত্বে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন/পৌরসভা কমিটিগুলো তারাই গঠণ করবেন।এবিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য পাওয়া যায় নি।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ