প্রতিনিধি ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ১১:২৯:৪০ প্রিন্ট সংস্করণ
মোঃ লুৎফর রহমান লিটন-সলঙ্গা সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে আজ বুধবার (১৪ই ফেব্রুয়ারি) ঐতিহ্যবাহী দই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের স্বরস্বতি পূজা অর্থাৎ শ্রীপঞ্চমী উপলক্ষ্যে প্রায় চারশত বছর পূর্ব থেকে শুরু হওয়া তাড়াশের দই মেলা এখনও তার ইতিহাস ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।
দই মেলাকে কেন্দ্র করে চার জেলার মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে মিলন মেলা ঘটে। দই মেলার ইতিহাস থেকে জানা গেছে, প্রায় চার শ’বছর পূর্বে তাড়াশের জমিদার বন ওয়ারি লাল রায় বাহাদুর ভারত বর্ষের বিভিন্ন সাধু ও বৈষ্যনদের তাড়াশের রাধাগোবিন্দ নাট মন্দির পরিদর্শনের জন্য নিয়ন্ত্রণ করেন। জমিদারি প্রথা অনুসরণ করে জমিদার রায় বাহাদুর লাল রায় অতিথিদের দই, চিরা, মুড়ি, মুড়কি দিয়ে আপ্যায়ন করেন। সেই থেকে প্রতিবছর তাড়াশে ঐতিহ্যবাহী দই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। অনেকেই দই মেলাকে দুটি ধর্মের মিলন মেলাও বলেন।
তাড়াশ পূজা উদ্যাপন কমিটির সাবেক সভাপতি ও সিরাজগঞ্জ জেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার গোস্বামী বলেন, দই মেলা এ অঞ্চলের চারটি জেলার হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের অতিথি আপ্যায়ন ও সাধারণ মানুষের মিলন ঘটে।
বাপদাদার আমল থেকেই দেখে আসছি দই মেলার যৌলষ। কালের বিবর্তনে অনেকটাই কমে আসছে। তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত কর্মকার জানান, দই মেলা তাড়াশের জমিদার আমলকে মনে করিয়ে দেয়। আমাদের তাড়াশেই এ অঞ্চলের মধ্যে দইয়ের মেলা বসে। দু’দিন আগে থেকেই ঘোষেরা তাড়াশ হেলিপ্যাড মাঠে নিজ নিজ জায়গা ধরে রাখে। তাড়াশের ইতিহাস ঐতিহ্য ধরে রাখার ধারক-বাহক দই মেলা অন্যতম।
তাড়াশের নির্মল সরকার জানান, জমিদার আমল থেকেই চলছে আসছে দই মেলা। দই মেলাকে কেন্দ্র করে আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব বাড়িতে আসে। আজকের দিনে শুধু দই চিড়া, মুড়ি ও মুড়কী দিয়ে অতিথি আপ্যায়নসহ আজকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িতে কোনো ভাত রান্না হবে না।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাবু আশুতোষ স্যানাল বলেন, তাড়াশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের যেমন ইতিহাস আছে তেমনি মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনেরও ইতিহাস ঐতিহ্য রয়েছে। প্রকার ভেদে প্রতিটি দইয়ের খুলি বা কাঁসা ২৫০টাকা থেকে ৩০০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট নারি ও সরাদই ১৮০টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। মূলত দুধের দামের উপর নির্ভর করে দইয়ের মূল্য নির্ধারণ করা হয় বলে জানান আনন্দ ঘোষ।
চার জেলার শতাধিক ঘোষ ও মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনও এখন দই মেলায় দইয়ের পরসা নিয়ে বসে আছে। বর্তমানে দুধের দাম বেশি হওয়ায় কারণে দইয়ের দাম তুলনামূলক ভাবে বেশি। তাড়াশের গোপাল ঘোষের দই, নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার শ্রীপুরের ঐতিহ্যবাহী চান্দু মিয়ার দই, শেরপুরের রিংকি দই, পাবনা ভাঙ্গুড়া, চাটমোহরের নিপেন ঘোষের দই, মিলন ঘোষের দই, তাড়াশের রতন, অধীর জীবন ঘোষের দই অন্যতম।
তাড়াশে হিন্দু সম্প্রদায়ের রয়েছে রাধাগোবিন্দ নাট মন্দি, জমিদারের কাচারী মন্দির,লোকো সাহিত্যের বেহুলার জিয়নকুপ, শিব মন্দি, গোপাল মন্দিরসহ ছোট বড় সহ প্রায় ১৫টি মন্দির তাড়াশে রয়েছে। অপর দিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের রয়েছে বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানীর দাদা হুজুর হজরত শাহ শরীফ জিন্দানী (র) পবিত্র মাজার শরীফ, ঘাসু দেওয়ানের মাজার শরীফ ইত্যাদি।