প্রতিনিধি ৮ নভেম্বর ২০২১ , ৪:১০:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ
নিউজ ডেস্কঃ
শুধু ডিজেলচালিত বাসের ভাড়া বাড়িয়েছে সরকার। গতকাল রবিবার নেওয়া এই সিদ্ধান্তের পর তিন দিন ধরে চলা গণপরিবহনের ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন বাস মালিকরা। ঢাকায় মাত্র ৫ শতাংশ বাস ডিজেলে চলে। দূরপাল্লার বাসের ৪০ শতাংশ চলে ডিজেলে।
বাকি বাস চলে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসে (সিএনজি)। কিন্তু সিএনজিচালিত বাসের মালিকরাও ধর্মঘটে যোগ দিয়েছিলেন। তবে তাঁদের ভাড়া বাড়ানো হয়নি।গত শনিবার লঞ্চ মালিকরাও ধর্মঘটে যোগ দেন। গতকাল বিআইডাব্লিউটিএর সঙ্গে লঞ্চ মালিকদের বৈঠকে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তের পর তাঁরাও ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন। তবে পণ্যবাহী যানবাহনের মালিকরা গতকালের বৈঠকে যোগ দেননি। তাঁরা ধর্মঘটও প্রত্যাহার করেননি।
গতকাল কয়েক দফায় সাত ঘণ্টার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বাস ভাড়া নির্ধারণ কমিটির প্রধান ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার। সন্ধ্যায়ই ভাড়া বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।
কোন বাস গ্যাসে আর কোন বাস ডিজেলে চলে, তা যাত্রীরা বুঝবে কিভাবে—এমন প্রশ্নের জবাবে নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ‘নিশ্চয়ই এটা চিহ্নিত করার জন্য সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। প্রয়োজনে ভাড়া মনিটরিংয়ের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নামবেন।’ কতসংখ্যক বাস ডিজেলে চলে জানতে চাইলে তিনি পরিষ্কার তথ্য দিতে পারেননি। বিআরটিএর চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই তথ্য বাস মালিকদের কাছে আছে।’ তবে গ্যাসে চলার পরও যেসব বাস এই ধর্মঘটে যোগ দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এখন থেকে দূরপাল্লার বাসে এক টাকা ৪২ পয়সার পরিবর্তে প্রতি কিলোমিটারে এক টাকা ৮০ পয়সা ভাড়া নেওয়া হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে এক টাকা ৭০ পয়সার বদলে ভাড়া নেওয়া হবে দুই টাকা ১৫ পয়সা। মহানগরে চলা মিনিবাসের ভাড়া এক টাকা ৬০ পয়সার জায়গায় দুই টাকা পাঁচ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই হিসাবে দূরপাল্লার ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে বাসের ভাড়া বাড়ল ২৭ শতাংশ আর মহানগরে ২৬.৫ শতাংশ।বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ছিল সাত টাকা। এটা এখন করা হয়েছে ১০ টাকা। মানে বাসে উঠলেই ১০ টাকা ভাড়া দিতে হবে। মিনিবাসের এই ভাড়া পাঁচ টাকা থেকে বাড়িয়ে আট টাকা করা হয়েছে।
ডিজেলচালিত বাসের ভাড়া বাড়ানোর বৈঠক থেকে বেরিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আজ (গতকাল) সন্ধ্যা থেকে বাস চালানোর জন্য সারা দেশের বাস মালিক-শ্রমিকদের অনুরোধ জানাচ্ছি।’
এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘২০১৩ সালের পর আর বাসের ভাড়া বাড়েনি। অথচ এর মধ্যে সব জিনিসের দাম বেড়েছে। এখন আবার জ্বালানি তেলের দামও বাড়ল। ডিজেলের বর্ধিত মূল্য বিবেচনা করলে ভাড়া খুব বেশি বাড়ানো হয়নি।’
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল। অথচ বৈঠকে বাড়ানো হলো বাসের ভাড়া। জ্বালানি তেলের দাম কমানোর বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কি না—এমন প্রসঙ্গে পরিবহন মালিকদের এই নেতা বলেন, ‘কথা হয়েছে। যেহেতু প্রজ্ঞাপন দিয়ে জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়েছে, এটি সরকার দেখবে।’বাসের ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটি বলছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর সরকার বাসের ভাড়া বাড়ালেও ডিজেলের দাম কমানো নিয়ে কোনো আলোচনা করছে না। যাত্রী প্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে মালিকদের পরামর্শ অনুযায়ী বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।
সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সরকার গণশুনানি ছাড়া অবৈধভাবে একলাফে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়িয়েছে। এই অজুহাতে পরিবহন ধর্মঘটের নামে জনগণকে জিম্মি করেন বাসের মালিকরা। যখন গ্যাসের দাম বাড়ে, তখন বাস মালিকরা বলেন, সব বাস গ্যাসে চলে। আর এখন ডিজেলের দাম বাড়ায় বাস মালিকরা বলছেন, সব বাস ডিজেলে চলে।
মোজাম্মেল হক বলেন, কোনোভাবেই ১৫ শতাংশের বেশি ভাড়া বাড়ানোর কথা না। যখন ডিজেলের দাম লিটারে তিন টাকা কমানো হয়েছিল, তখন ভাড়াও প্রতি কিলোমিটারে তিন পয়সা কমানো হয়। এখন তাহলে কেন এত ভাড়া বাড়বে।তবে পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘এটা মন্দের ভালো। পরিবহন মালিকরা ভাড়া আরো বাড়াতে চাচ্ছিলেন।’ ডিজেলচালিত বাস চিহ্নিত করার উপায় কী—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপাতত বাসে বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়ার তালিকার সঙ্গে ডিজেলচালিত বা গ্যাসচালিত বাস লিখে দিতে হবে।’
হাদিউজ্জামান বলেন, ‘বিআরটিএ নিজেই জানে না কত বাস ডিজেলে চলে। অথচ নিবন্ধন দেওয়ার সময় বা ফিটনেস সনদ দেওয়ার সময় খুব সহজেই এই তথ্য নিয়ে রাখা যায়। তবে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য আমার বিদ্যুত্চালিত বাসের দিকে ঝুঁকতে হবে। ২০৪০ সালের মধ্যে আমাদের বিদ্যুতের সক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে। তা ছাড়া বিদ্যুৎচালিত যানের দিকে সারা বিশ্বই ঝুঁকছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দূরপাল্লার বাসের কাউন্টারগুলোতে রাতের গাড়ির টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে।লঞ্চের সর্বনিম্ন ভাড়া বাড়ল ৩৫% গতকাল রাত থেকেই পুনর্নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী লঞ্চ চলাচল শুরু হয়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডাব্লিউটিএ) কার্যালয়ে সংস্থাটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে লঞ্চ মালিক সমিতির নেতাদের বৈঠকে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠক শেষে বিআইডাব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক সাংবাদিকদের জানান, প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ৬০ পয়সা। বর্তমান ভাড়া এক টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে দুই টাকা ৩০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে প্রযোজ্য হবে। ১০০ কিলোমিটারের পর প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া হবে দুই টাকা। সর্বনিম্ন যাত্রীপ্রতি ভাড়া ছিল ১৮ টাকা। সেটি বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। সেই হিসাবে ভাড়া বেড়েছে শতকরা ৩৫ শতাংশ।