প্রতিনিধি ২২ জুন ২০২২ , ১:৩৪:০৭ প্রিন্ট সংস্করণ
মোঃ লুৎফর রহমান লিটন-সলংগা সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
আজ ২২ মে ২০২২ তারিখে সুপ্রিম কোর্টের ১০ জন আইনজীবী বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ‘জাতীয় কবি’ হিসাবে ঘোষনা করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্ট বিভাগে একটি রীট আবেদন দায়ের করেছেন।
এর আগে সকালে মাননীয় বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং মাননীয় বিচারপতি এস, এম, মনিরুজ্জামন-এর দ্বৈত বেঞ্চে রীট দায়েরের অনুমতি প্রার্থনা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোঃ আসাদ উদ্দিন। মাননীয় আদালত বিষয়টি শুনে রীট দায়েরের অনুমতি প্রদান করেন।
পরে রীট আবেদনকারী আইনজীবী মোঃ আসাদ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, দেশের আপামর জনগণ এমনকি ছোট্র শিশুটিও জানে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। কিন্তু বাস্তবে এটির কোন দালিলিক ভিত্তি নেই। মৌখিকভাবে তিনি জাতীয় কবি হিসাবে পরিচিত হলেও লিখিতভাবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। বলা হয়ে থাকে, ১৯২৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর কলকাতার আলবার্ট হলে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সেখানে সর্বভারতীয় বাঙ্গালীদের পক্ষ থেকে কবিকে জাতীয় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। ঐ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নজরুলকে ‘জাতীয় কবি’ হিসাবে ঘোষনা করা হয়। সেই থেকে মুখে মুখে তিনি জাতীয় কবি হয়ে আছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সরকারীভাবে তাঁকে জাতীয় কবি হিসাবে ঘোষনা করে কোন প্রজ্ঞাপন বা গেজেট প্রকাশ করা হয়নি।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২৪ মে বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে কবিকে বাংলাদেশে আনা হয়। বসবাসের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ধানমন্ডিতে তাঁকে একটি বাড়ী দেওয়া হয়। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁকে ডি-লিট উপাধীতে ভূষিত করা হয়। এরপর ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়ে সরকারী আদেশ জারী করা হয়। ১৯৭৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী তাঁকে ‘একুশে পদক’ দেওয়া হয়।
কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং কবির মৃত্যুর ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির বিষয়ে কোন যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। যদিও ইতোপূর্বে নজরুল ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে দু’একবার চিঠি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেটি কোন আলোর মুখ দেখেনি।
আইনজীবী আসাদ উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের দু’টি আইনে জাতীয় কবি হিসাবে নজরুলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন সরকারী আয়োজনে তাঁকে জাতীয় কবি হিসাবে উল্লেখও করা হয়।
কিন্তু সবই পরোক্ষ স্বীকৃতি। এমন স্বীকৃতি কালের পরিবর্তনে মুছে যেতে পারে। বাংলাদেশে প্রচলিত অন্যান্য জাতীয় পুরস্কার ও পদক প্রদানে অনিবার্য কিছু আনুষ্ঠানিকতা অনুসরন করতে হয়। সম্মাননা পত্র, পদক ইত্যাদি প্রদান করা হয়। কিন্তু কাজী নজরুল ইসলামের জাতীয় কবি ঘোষনায় এমন কোন আনুষ্ঠানিকতার তথ্য বা প্রমাণ নেই। আসাদ উদ্দিন আরো বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ইতিহাস ও জাতীয় স্বীকৃতি কখনো অলিখিত থাকতে পারে না। অলিখিত ইতিহাস ও তথ্য সময়ের বিবর্তনে বিলীন হয়ে যায়। এছাড়া নজরুলকে জাতীয় কবি হিসাবে ঘোষনার দাবীতে কবি পরিবারের পক্ষ হতে বারবার অনুরোধ হয়েছে। নজরুল গবেষক এবং সাহিত্য-সংস্কৃতি সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকেও অনেক দাবী জানানো হয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাই দেশের সচেতন নাগরিক এবং উচ্চাদালতের আইনজীবী হিসাবে রীট আবেদন দায়ের করা হয়েছে।
রীট আবেদনকারী অন্যান্য আইনজীবীরা হলেন মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন, মোঃ জোবায়দুর রহমান, আল রেজা মোঃ আমির, মোঃ রেজাউল ইসলাম, কে এম মামুনুর রশিদ, মোঃ আশরাফুল ইসলাম, শাহীনুর রহমান, মোঃ রেজাউল করিম এবং মোঃ আলাউদ্দিন। রীট আবেদনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক এবং নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালককে বিবাদী করা হয়।