প্রতিনিধি ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ , ৩:৪৯:৩০ প্রিন্ট সংস্করণ
কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি:
দেবীদ্বার উপজেলাধীন বাগুর শান্তিনগর সীমান্তে চোর সন্দেহে বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) ভোরে আশিকুর রহমান (১৯) নামে এক যুবককে গণপিটুনি দেয় এলাকাবাসী। দুই দিন বাড়িতে চিকিৎসাধীন থাকার পর তার শারিরীক অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা তাকে শনিবার (১৪ জানুয়ারি) ভোরে হাসপাতালে নিলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত আশিকুর রহমান চান্দিনা উপজেলা সদরের মহারং এলাকার বাবুর্চি মিজানুর রহমানের ছেলে। পেশায় রিকশা চালক ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার ভোরে চান্দিনা-বাগুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন জেলার দেবীদ্বার উপজেলাধীন বাগুর শান্তিনগর সীমান্ত এলকার একটি দোকানের টিউবওয়েলের ওপরের অংশ চুরির অভিযোগে তাকে আটক করে ওই এলাকার ১৫-২০ জন লোক তাকে গণপিটুনি দেয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে। তাকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে নেওয়ার কথা বললে পুলিশের ভয়ে সে রাজি হয়নি। পরে তাকে বাড়িতে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
এদিকে শনিবার ভোরে তার শরিরীক অবস্থার অবনতি হলে তাকে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এ সময় সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তখন পরিবারের সদস্যরা জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ এসে হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে।
চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাহাবুদ্দীন খান জানান, ঘটনাটি চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড হলেও সেটি দেবীদ্বার উপজেলাধীন বাগুর শান্তিনগর সীমান্তে পড়েছে। যেহেতু আমরা ‘৯৯৯’ থেকে ফোন পেয়ে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেছি, তাই ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি। এখানে সীমান্ত জটিলতা রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দিলে এবং নিহতের পরিবারের লিখিত অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যপারে শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ কমল কৃষ্ণ ধরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এ বিষয়ে আমরা কোন অভিযোগ পাইনি। যেহেতু ঘটনাস্থল দেবীদ্বারে সে কারনে যদি নিহতের পক্ষের কেউ অভিযোগ করেন, তাহলে তদন্তসাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। বিষয়টি আমরাও খোঁজ খবর নিচ্ছি। উল্লেখ্য, এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পালাসুতা গ্রামেও ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে দুজন নিহতের ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনা নিয়েও ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।
নিহতদের পরিবারের অভিযোগ, পূর্বশত্রুতার জেরে ডাকাত আখ্যা দিয়ে তাদের হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে আইনশৃংলা বাহিনী তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।তবে এ ঘটনায় কোন মামলা না নিয়েই শনিবার সন্ধায় নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে নিজ নিজ এলাকায় দাফন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কাজিয়াতল গ্রামের নিহত নুরে আলমের বাবা আবদুস ছালাম। আবদুস ছালাম ক্ষোভের সহিত আরো জানান, থানায় মামলা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পুলিশ মামলা না নেয়ায় রোববার আদালতে যেয়ে মামলা দায়ের করার চেষ্টা করবো।