প্রতিনিধি ১৭ আগস্ট ২০২০ , ৪:১৪:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ
মো,রাশেদুল ইসলাম( রাশেদ) -চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি:
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর পৌর শহরের সুবলপুর গ্রামের মানুষ সাপ আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। সাপের দংশন থেকে রক্ষা পেতে মিলাদ মাহফিল, কবিরাজের তন্ত্র-মন্ত্র আর মানত করছেন আতঙ্কিত গ্রামবাসী। মাসব্যাপী এ গুজবে অর্ধশতাধিক মানুষকে সাপে দংশন করলেও মারা যাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে গ্রামের কিছু মানুষের দাবি এ গুজবকে কাজে লাগিয়ে সুবিধাবাদী একটি চক্র মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে।
সরজমিনে সুবলপুরের একাধিক ব্যাক্তি জানান, এক মাস আগে কোন একদিন গ্রামে সাপের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে প্রতি রাতেই ৪-৫ জনকে সাপে দংশনের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে গত এক মাসের ব্যবধানে সুবলপুরের অর্ধশতাধিক মানুষকে সাপে কেটেছে গুজব ছড়িয়ে পড়লে এখনও মৃত্যুর কোনো ঘটনা ঘটেনি।
Ad by Valueimpression
সাপে কাটার রোগীদের মধ্যে অন্যতম রফিকুল ইসলাম তার স্ত্রী, আবুল হাসেমের দুই মেয়ে, ইয়ামিনের বড় মেয়ে ইভা, আমিনের স্ত্রী কাকলী। আনছার আলীর ছেলে মুলাম হোসেন, খোদা বক্সের ছেলে দাউদ হোসেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সুবলপুর গ্রামের রওশন কবিরাজের দাবি, আধুনিক যুগেও জিন সাপের আবির্ভাব ঘটতে পারে। আর জিন সাপে দংশন করলে কবিরাজের চিকিৎসা ছাড়া বাঁচার কোনো পথ নেই। এদিকে সাপ আতঙ্ক গুজবকে বাস্তবে প্রমাণ করতে গিয়ে গ্রামের খলিল ও আনোয়ার কথিত কবিরাজ এনে গ্রামে ঝাঁড়-ফুক দিচ্ছে এবং ঘটনা গুজব নয়, বাস্তব প্রমাণ করতে গিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
নুবলপুর গ্রামের বজলুর রহমান ও নুর ইসলাম বলেন, এক শ্রেণির মানুষ গ্রামে সাপ গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। চক্রটি বিভিন্ন এলাকা কবিরাজি এনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। আর ঝাঁড়-ফুকের নামে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে নগদ টাকা পয়সা। তবে এ ঘটনায় ৪০-৫০ জনের বেশি আক্রান্ত হলেও এখনও পর্যন্ত কারো মৃত্যু না হওয়ায় তা অনেকের কাছে গুজব মনে হয়েছে।
জীবননগর পৌরসভার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর আপিল মাহমুদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রতিদিন ৪-৫ জনের সাপে কাটলেও কারো মৃত্যু না হলেও পুরো গ্রাম জুঁড়ে চলছে আতঙ্ক। এ অবস্থায় মানুষের আরামের ঘুম হারাম হয়েছে। সাপের উপদ্রুব থেকে গ্রামবাসী রক্ষা করতে গ্রামে দোয়ার আয়োজন করা হয়। শনিবার কবিরাজ এনে গ্রাম বন্দী করার কারণে রোববার রাতে কাউকে সাপে কাটার ঘটনা ঘটেনি। তবে শুনছি সোমবার সকালে মাঠে কাজ করার সময় মহিউদ্দিন নামের এক কৃষককে সাপে কেটেছে। তবে জীরননগর হাসপাতালে সাপের ভ্যাকসিন না থাকায় আরো বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে মানুষ। সাপে কাটলেই বাধ্য হয়ে প্রাচীন যুগের সেই কবিরাজি সিস্টেম মানতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জুলিয়েট পারউইন বলেন, ঘটনার কথা শুনেছি। তবে সুবলপুর থেকে সাপে কাটা কোনো রোগী হাসপাতালে এসেছে বলে আমার জানা নেই। প্রতি বছর উপজেলার কোনো না কোনো গ্রামে এগুজব ওঠে থাকে। বাস্তবতা অনুসন্ধান করতে গেলে আর সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায় না।