• আইন ও আদালত

    চাঁপাইনবাবগঞ্জে তাবাসসুম ক্লিনিকের জাতীয় পতাকার অবমাননার ঔদ্ধত্য

      প্রতিনিধি ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ , ৬:২০:৩১ প্রিন্ট সংস্করণ

    মোঃ লুৎফর রহমান লিটন-সলংগা সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

    লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের সার্বভৌমত্বের নিদর্শন লাল সবুজের পতাকা। এই পতাকা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় শহিদের বুকের তাজা রক্তে সিক্ত সবুজ জমিনের কথা। স্মরণ করিয়ে দেয় সেসব মানুষের কথা যারা নির্দ্বিধায়, অকাতরে প্রাণ দিয়েছে এই ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইলের ভূখণ্ডের মুক্তির জন্য। লাল সবুজের এই পতাকা তাই আমাদের হৃদয়ে জাগায় দেশপ্রেম, আর দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার প্রেরণা।

    “জাতির পতাকা এখনো খামচে আছে পুরনো শকুন” কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহের এই পঙ্কতি ফের মনে পড়ে যায় জাতীয় পতাকার অবমাননা দেখে। বিজয়ের ৫০ বছর ও ভাষা শহীদের ৬৯ বছরে এসেও লাখো শহীদের রক্তে ভেজা লাল সবুজের পতাকার ওপর এখনো যেন শকুনের কুদৃষ্টি রয়ে গেছে।
    চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র শান্তি মোড়ে তাবাসসুম ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড ডেন্টাল কেয়ার নামে একটি ক্লিনিক যেন সেটাই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো।

    বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) এই ক্লিনিকের সামনে ফুলের টবের নিচে পতাকা টাঙানো হয়েছে। এভাবে পতাকা টাঙিয়ে রাখা জাতীয় পতাকার অবমাননা করার শামিল। এতে সরকারি বিধি মোতাবেক পতাকা না টাঙিয়ে পতাকার অবমাননা করা হয়েছে।

    সেদিন ছিলো বিজয় দিবসের পূর্বের দিন অর্থাৎ ১৫ ডিসেম্বর। ৭১ এ শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করতে জাতীয় পতাকা ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে উত্তোলনের নিয়ম রয়েছে। তাবাসসুম ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড ডেন্টাল কেয়ার’র এহেন কর্মকান্ডের বিষয় নিয়ে এলাকার সর্বত্র আলোচনার ঝড় বইছে। অনেকেই বলেছেন, জাতীয় পতাকাকে অবমাননা বা অসম্মানকে কোনোভাবেই মেনে নেয়া যাবে না। তার অপব্যবহার রোধে আমাদের সরকারি তৎপরতার পাশাপাশি নাগরিক সমাজকেও দায়িত্বশীল হতে হবে।

    বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান টুরু বলেন,
    দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও দুইলক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের প্রিয় লাল সবুজের পতাকা। এই জাতীয় পতাকা শুধু একটি কাপড়ের টুকরো নয়। স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রতীক। জেনে হোক বা অজ্ঞতার কারণে হোক, জাতীয় পতাকার অবমাননা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জাতীয় পতাকা কীভাবে ব্যবহৃত হবে, সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট আইন থাকা সত্ত্বেও অজ্ঞতার কারণে তার লঙ্ঘন হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

    সোনামসজিদ স্থলবন্দর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, জেলার বিশিষ্ট সাংবাদিক শাখায়াত জামিল দোলন বলেন, জাতীয় পতাকার অবমাননা হলেও এদিকে প্রশাসনের কোনো নজর নেই। এরই ফলে বিজয়ের ৫০ বছরেও আমরা শিখতে পারিনি পতাকা ব্যবহারের সঠিক নিয়ম কানুন। যারা পতাকার অবমাননা করে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ।

    চাঁপাইনবাবগঞ্জ বার এর এ্যাডভোকেট তসিকুল ইসলাম বলেন, আইনের ৫ ধারায় বলা হয়েছে, জাতীয় পতাকার প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করা বা জাতীয় পতাকার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন না করলে ওই ব্যক্তিকে ১ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। ২০১০ সালে সংশোধিত আইনে সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত শাস্তি এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়। তবে অজ্ঞতার কারণে যারা না জেনে, না বুঝে আর অতি উচ্ছ্বাসে যারা পতাকা ব্যবহারবিধি লঙ্ঘন করেন, তাদের অপরাধের মাত্রা বিবেচনা করে এই শাস্তির বিধান যথাযথ হতে পারে।

    এ বিষয়ে তাবাসসুম ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড ডেন্টাল কেয়ার এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুর এলাহী বলেন, আমি সেই দিন ক্লিনিকে ছিলাম না, তাই বিষয়টি অবগত নয়। তবে এসে শুনেছি টবের নিচে নয়, টবের উপর লোহার মাচা, তার উপর ফিতায় বেঁধে পতাকা রৌদ্রে দিয়েছিলো ক্লিনিকের আয়া।
    জাতীয় পতাকা এভাবে ময়লা ও ফুলের টবের পাশে শুকাতে দেয়া পতাকার অবমাননা কি না? এমন প্রশ্ন করা হলে সদুত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, এটাতো আমি দিইনি, দিতেও বলিনি, দিয়েছে আয়া।সচেতন মহলের দাবি, জাতীয় পতাকার এত বড় অবমাননার জন্য তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্ত মূলক স্বাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হোক

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ