প্রতিনিধি ১ অক্টোবর ২০২২ , ৯:৫৮:০৮ প্রিন্ট সংস্করণ
যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া ও দেখিবে তাই। পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন। ছোট ছোট বালু কার কনা , বৃন্দ বৃন্দ জল গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অটল। বড় বড় কবিরা এরকম হাজারো কবিতা, বানি , উক্তি লিখেছেন। কিন্তু আসলে সত্যি কথা বলতে আমাদের বাস্তব জীবনের ঘটনা সম্পূর্ণ উল্টো। ২০০০ হাজার সাল অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। বন্ধু বান্ধব নিয়ে ভালো দিন কাটছিলো, হঠাৎ করেই সামনে পরলো, একটা মেয়ে, বিধাতার কি অপূর্ব সৃষ্টি, কোনো অবস্থাতেই মেয়েটির উপর থেকে চোখ সরিয়ে নিতে পারছিলাম না। হরিণের মতো চোখ, এলোমেলো চুল যেনো মনে হচ্ছিল কোনো বেহেস্তি হুর আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
কোনো রকম নিজেকে সামলে নিয়ে সরে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমি দেখেছি মেয়েটি হাসতে হাসতে আস্তে আস্তে আমার সামনে দিয়ে চলে গেল। সত্যি বলতে তার হাসিতে মুক্ত ঝরছিল, আমি বাসায় চলে এলাম, কিন্তু কোনো কিছু যেনো আমাকে ঐ মেয়েকে ভুলতে দিচ্ছে না। আমার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করলাম। তারা আমাকে শান্তনা দিয়ে বলেন ঠিক আছে আমার দেখবো কিভাবে কি করতে পারি। কয়েক দিন ধরে শুধু দূরে থেকে দেখার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি । হঠাৎ একদিন সুযোগ পেয়ে যাই কথা বলার। কোনো কিছু না ভেবেই সামনে দাঁড়িয়ে বললাম আপনার নাম কি, মেয়েটি হাসতে হাসতে বলে সৃতি। তখন আমি তাঁর হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে বললাম কাল এখানে অপেক্ষা করবো।
আমি চলে আসলাম মেয়েটি কিছু না বলে চলে গেল। কিন্তু পরের দিন সকালে অপেক্ষা করছি কিন্তু মেয়েটা এলো না। মনে মনে ভাবলাম হয়তো কোনো সমস্যা হয়েছে। বাসায় চলে আসলাম। দুই দিন পর দেখা পেলাম তখন পিছন পিছন হাঁটছিলাম, মেয়েটি মনে হয় আগে থেকেই আমার পিছনে থাকাটা বুঝতে পারে। কিছু দুরে গিয়ে দাঁড়িয়ে কোনো কথা না বলে আমার হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দেয়। এবং চলে যায়। আমি অনেক আগ্রহ নিয়ে চিরকুট খুলে দেখি একটা লাইন লেখা, আমিও তোমাকে ভালোবাসি। আমি মহা খুশি সারাদিন অনেক আনন্দের মধ্যে কাটে সেই দিন। এভাবে শুরু হয় আমাদের গল্প। ২০০২ সাল।
হঠাৎ করেই সামনে দাঁড়িয়ে মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বলল তুমি কি সত্যি আমাকে ভালবাস আমি বললাম কেন তোমার কি কোনো সন্দেহ আছে আমার প্রতি। সে কোনো রকম উত্তর না দিয়ে বললো আমার বাবা পুলিশ ইন্সপেক্টর,সে তার বন্ধুর ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিবে বলে জানিয়েছেন। কথা একরকম পাকাপাকি হয়েগেছে। এখন তুমি যদি সত্যি আমাকে ভালবাস তাহলে চল আমরা পালিয়ে যাই। আমি কোনো কিছু না ভেবেই বললাম তুমি একটু কয়টা দিন অপেক্ষা করো আমি আমার বাবাকে বলে সুজা আমার বাড়ী নিয়ে যাবো, মেয়েটি বলল তোমার বাবা কি করেন সে রাজি হবেন। আমি বললাম আমার বাবা আমার জন্য সব কিছু করতে পারে। তাকে শান্তনা দিয়ে। পাঠিয়ে দিলাম। আমি বাসায় চলে আসলাম,সব ঘটনা মার সাথে খুলে বললাম। মা রাতে আমার বাবার কাছে বলেন। কোনো উত্তর না দিয়ে, আমাকে নিয়ে গ্রামে চলে আসে। বেশ কিছুদিন আমাকে বাবা বিভিন্ন ধরনের কাজের চাপে রাখেন।
ওদিকে আমাদের আর কোনো যোগাযোগ নেই। মাস খানেক পরে আমি যখন আমার বন্ধুর সাথে দেখা করি মেয়েটির খবর জানতে চাইলে।সে আমাকে বলল গত সপ্তাহে বিয়ে হয়ে গেছে। শুনে আমার মাথায় যেন বাজ পড়লো। কোনো রকম নিজেকে সামলে নিয়ে বাড়ি চলে আসলাম। অনেক দিন পর সেই ঢাকা থেকে ট্রেনে আসার পথে সামনে সিটে বসা বোরকা পরা নারী কূলে রাজপুত্রের মতো একটা ছেলে,তার পাশে বসে আছে কালো একটা পুরুষ। একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছে না। মনে হচ্ছে ঝগড়া করেছেন। সাত পাঁচ ভাবতে লাগলাম ট্রেন চলতে থাকে। কিছু দুরে চলে আসলাম মেয়েটি সালাম দিয়ে বলেন ভাই আপনি কি কাঁচিঝুলি থাকেন আমি চুপচাপ সে আমাকে আবার জিজ্ঞেস করল ভাইয়া আমি আপনাকে কিছু বলছিলাম আপনি কি শুনতে পারছেন।
আমি বললাম জি বলেন সে মহিলা বললো আপনি কি কাঁচিঝুলি থাকেন আপনার নাম কি আকাশ আমি বললাম হ্যাঁ আপু কিন্তু আপনি কে আমার নাম জানলেন কিভাবে। তখন মহিলা তার কূল থেকে ছেলেটা আমার কূলে দিয়ে বলেন ভাই একটু ধরেন। আমি কিছু না বলে ছেলে টা কূলে নিলাম। পাশে থাকা লোকটা কিছু না বলে উঠে সামনে চলে গেল। তখন মহিলা আমাকে বলল কেমন আছো তুমি। আমি তখন চমকে উঠলাম বুঝতে পারলাম সে আর কেউ নয় আমার স্বপ্ন । তখন অনেক কষ্টে না চেনার ভান করে বললাম আমি ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন কোথায় যাবেন আর আপনি কে।
তখন মহিলা মুখের উপর থেকে বোরকার কিছুটা সরিয়ে নিয়ে বলল দেখ আমাকে চিনতে পারছ। আমার চোখ দিয়ে আমার অজান্তে পানি বেড়িয়ে এলো। আমি কোনো কথা বলতে পারছি না। অনেক কষ্টে বললাম পাশের লোকটা কে সে বলল আমার স্বামী পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর।আর এটা আমাদের সন্তান। কোনো দিন ভাবিনি এরকম ভাবে আমাদের দেখা হবে। সে বললো আমি এখন ও তোমার কথা ভাবি। বলতে বলতে সে চোখ মুছে নিয়ে বলল আমি ভালো নেই। আমি জানি তুমিও ভালো নেই। ঐ দিনটি শুরুর দিন থেকে আরো বেশি অমর আজ ও ভুলতে পারি নাই গল্পের শেষটা।