• চট্টগ্রাম বিভাগ

    কী হতে চাও-শাহনেওয়াজ শাহ্

      প্রতিনিধি ২২ নভেম্বর ২০২১ , ৫:১৪:২২ প্রিন্ট সংস্করণ

    শাহনেওয়াজ শাহ্-

    আগামীকাল দশম শ্রেণির বিদায় অনুষ্ঠান। আজ স্কুল জাঁকজমকপূর্ণ কারণ স্কুলে আসতে কেউ ভুল করেনি। সবাই জরো হয়ে ক্লাসে প্রবেশ করল। বিদ্যালয়টি এলাকার একটি সুনামধন্য প্রতিষ্টান। প্রতিবছর এই বিদ্যালয় থেকে অনেক ছাত্রছাত্রী A+ ও গোল্ডেন A+ পেয়ে বের হয়। শিক্ষক ক্লাসে প্রবেশ করলেন। তিনি লক্ষ করলেন আজ কারো মুখ আনন্দে উৎপুল্ল আবার কারো চেহারাই বিদায়ের শোকাহতের র‍্যাশ রয়েছে। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন আজ পাঠ্যবইয়ের ক্লাস নিবেন না। তিনি আজ সবার জীবনের লক্ষ্য জানবেন। তিনি সর্বপ্রথম ক্লাসের ফাস্ট বয় আরিফকে দাঁড় করলেন, জিজ্ঞেস করলেন তার জীবনের উদ্দেশ্য কী?
    আরিফ বলল, স্যার আমি ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই।
    শিক্ষক বললেন, তুমি কেন ইঞ্জিনিয়ার হতে চাও?
    আরিফ বলল, স্যার আমার বাবা মায়ের ইচ্ছে আমি বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হব। তাই আমি ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। আমি আমার বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।
    আরিফের জবাব শোনে সবাই করতালি দিয়ে তার সাফল্য কামনা করল।

    তারপর শিক্ষক সাইমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি বড় হয়ে কী হতে চাও?
    সাইমা বলল, স্যার আমি ডাক্তার হতে চাই।
    স্যার বললেন, তুমি কেন ডাক্তার হতে চাও?
    সাইমা বলল, স্যার আমার ছোট থেকেই ইচ্ছে ডাক্তার হব। এলাকাজুড়ে থাকবে আমার খ্যাতি। সবাই আমাকে ডাক্তার হিসেবে চিনবে, বাবা মার মুখ উজ্জল করব, তাই আমি ডাক্তার হতে চাই।
    সবাই তার কথা শোনে করতালি দিল এবং তার সাফল্য কামনা করল।

    তারপর শিক্ষক বুলবুলকে জিজ্ঞেস করল, তুমি বড় হয়ে কী হতে চাও?
    বুলবুল বলল, স্যার আমি পুলিশ হতে চাই।
    শিক্ষক বললেন, দুনিয়াতে এত কাজ থাকতে তুমি কেন পুলিশ হতে চাও?
    বুলবুল বলল, স্যার পুলিশের অনেক সম্মান আছে, সবাই পুলিশকে ভয় পায় তাছাড়া পুলিশে অনেক টাকাও ইনকাম করা যায়। তাই আমি পুলিশ হব।

    সবাই করতালি দিয়ে তার সাফল্য কামনা করল।

    অতপর স্যার নাদিয়াকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কী হতে চাও?
    নাদিয়া বলল, স্যার আমি টিচার হতে চাই।
    স্যার বললেন, কেন?
    নাদিয়া বলল, স্যার পড়াতে আমার ভাল লাগে তাছাড়া শিক্ষকতা একটি সম্মানের পেশা তাই আমি টিচার হতে চাই।

    আবারও সবাই করতালি দিয়ে তার সাফল্য কামনা করল।

    আরেকজন বলল, আমি বাহিনীর চাকরি করতে চাই, দেশের হয়ে লড়তে চাই।

    আরেকজন বলল, আমি ব্যাংকার হতে চাই।
    আরেকজন বলল, আমি আইনজীবী হতে চাই।

    এভাবেই সবাই যার যার জীবনের লক্ষ্যের কথা বলল। লক্ষ করা গেল অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীরাই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও ব্যাংকার হতে চাই।

    পরিশেষে বাকি রইল সাজিদ, শিক্ষক সাজিদকে জিজ্ঞেস করল তুমি বড় হয়ে কী হতে চাও?
    সাজিদ বলল, স্যার এতসব ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও ব্যাংকারের প্রতিযোগিতাই আমি টিকে থাকতে পারব না। আর আমি এমন আকাশ কুসুম স্বপ্নও দেখি না। স্যার, আমি মানুষ হতে চাই। মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। যেখানে আছে গরিব-অসহায়, নির্যাতিত-নিপিড়ীত মানুষ আমি তাদের বন্ধু হতে চাই। স্যার, আজ মানুষ হওয়ার প্রতিযোগিতাই কোনো প্রতিযোগি নেই। আমি পারব স্যার আমি একজন বিবেকবান মানুষ হব। আমি মানুষের মত মানুষ হয়ে মনুষ্যত্বের শিক্ষা দিব।

    সাজিদের কথা শুনে ক্লাস স্তব্ধ হয়ে গেছে। কেউ কথা বলছে না, কেউ করতালিও দিচ্ছে না। শিক্ষকের চোখে পানি চলে আসল। শিক্ষক আবেগ আপ্লুত হয়ে আরিফকে কাছে টেনে নিয়ে জরিয়ে ধরলেন।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ