প্রতিনিধি ৯ মার্চ ২০২১ , ৩:৪১:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ
সাদ্দাম হোসেন মুন্না নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ওসমান পরিবার প্রধানমন্ত্রীর নাম বেঁচে নারায়ণগঞ্জ শহরে চলছে। নাম বেচা বন্ধ করেন। প্রশাসন নিয়ে ঘোরা বন্ধ করে দেখেন আপনারা কোথায় যান? রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে কুলি, মজুর, শ্রমিক আপনাদের পিটিয়ে মারবে এ শহরে। একের পর এক নাটক সাজাচ্ছেন।
কখনো হিন্দু সম্পত্তি, কখনো মসজিদের কথা, কখনো হেফাজতকে নামান, আবার পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে অন্য কাউকে নামান। প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে মন্ডলপাড়ায় একটি মডেল মসজিদ করবেন। সেটার কাজ বন্ধ করে রেখেছে। ডিসি সাহেব ইঞ্জিনিয়ারকে বলেছেন, কাজ বন্ধ রাখুন। কারণ কী?
শামীম ওসমান মন্ডলপাড়াতে মসজিদ করতে দিবে না। কারণ আইভী সেখানে গিয়েছে বলে। কী বিচিত্র হয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন। খুনিরা প্রশাসনের মদদে যা খুশি করছে। সেটা হতে নিশ্চয়ই আমরা দেবো না। পালাবো আমরা না, পালাতে হবে আপনাকে, আপনার ফ্যামিলিকে। যারা মানুষ মারেন, হত্যা করেন, মিথ্যাচার করেন, বড় বড় কথা বলেন। প্রশাসন, পুলিশ ছেড়ে নেমে আসুন রাস্তায় দেখি আপনার কত বড় আপনার ক্ষমতা।
সোমবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যায় শহরের ৫ নম্বর খেয়াঘাট এলাকায় ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ৮ বছর উপলক্ষে আয়োজিত ‘আলোর ভাসান’ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমানের উদ্দেশ্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আইভী বলেন, ‘আজকে নারায়ণগঞ্জে তারা যেভাবে মিথ্যা কথা বলছে, মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার বানায়, রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধা বানায়। যা চাচ্ছে তাই করছে।
কাদের শক্তির উপর নির্ভর করে? প্রশাসনের? প্রশাসন ছাড়া তারা জিরো। তারা মানুষ ছাড়া, প্রশাসন ছাড়া রাস্তায় হাঁটতে পারে না। প্রশাসনের ছত্রছায়ায় বসে, ডিসি অফিসে, এসপি অফিসে, উপজেলায় গিয়ে অনেক বড় বড় কথা বলেন।
কইলজা খুলে নিবে, পিষে মারবে, মুরগীকে খাওয়াবে, মাছকে খাওয়াবে। কত কথা যে বলতে পারে। ইদানিং আবার বলতাসে, ইউনিফর্ম পড়া মানুষই থাকতে পারে না আর বারো হাত শাড়ি পড়া নারী কী ক্ষমতা রাখবে। তাহলে প্রধানমন্ত্রী কি বারো হাত শাড়ি পড়েন না? উনি কি রাষ্ট্র চালাচ্ছেন না?
তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই মনে হয় একটু চুপসে গেছি। কথা বলি না। কথা বলুন, ত্বকী তো আমাদের কথা বলা শিখিয়েছে, সাহস দেখিয়েছে। ত্বকী আমাদের সন্তান হয়ে শিখিয়ে গেছে কীভাবে বাঁচতে হবে।
অন্যায়ের কাছে মাথা নত করা যাবে না। আবার শুনি, উনার (শামীম ওসমান) ওয়াইফ লিপি ভাবী নাকি বলে, পালাবার পথ খুঁজে পাবে না। উনি হয়তো ভুলে গেছেন, ২০০১ সালে কীভাবে পালিয়েছিলেন।
উনি মনে হয় ভুলে গেছেন, ওনার স্বামী কীভাবে বোরকা পরে পালিয়েছিল। ৭৫ এর পরে আলী আহম্মদ চুনকা এই শহরে ছিল। আওয়ামী লীগের লোকজনকে রক্ষা করেছে, নারায়ণগঞ্জবাসীকে রক্ষা করেছে।
নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করুন। একপেশে বক্তব্য দিবেন না। এই শহরের চরিত্র এখনো আপনারা জানেন না। নিত্যনতুন প্রশাসনের লোক আসেন, তাদের গরম গরম কথা শুনিয়ে মনে করেন, নারায়ণগঞ্জের অভিভাবক তারাই।
অভিভাবক কিসের? ফুটপাতের, সন্ত্রাসের, খুনের অভিভাবক তারা। সাধারণ মানুষ কী বলে শুনেন। রাষ্ট্রীয় ট্যাক্সের পয়সায় আপনারা বেতন নেন। সুতরাং নারায়ণগঞ্জের মানুষের পাশে থাকেন। কোনো খুনির পৃষ্ঠপোষকতা করবেন না।
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়ের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, নিহত ত্বকীর পিতা শিল্পী রফিউর রাব্বি, ঊদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন, জেলা সভাপতি জাহিদুল হক দিপু প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।