পিং না এক টি নাম ,একটি ইতিহাস । পিংনা একটি ঐতিহ্যবাহী জনপদ ! জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলায় অবস্থিত । যমুনা নদী বিধৌত পিংনা একটি নদী বন্দর ও বটে ! ব্রিটিশ আমলে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার টাঙ্গাইল এর অন্তর্ভুক্ত ছিল । বর্তমানে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার অন্তর্ভুক্ত একটি ইউনিয়ন । পিংনা নামটি কবে কখন কিভাবে উৎপত্তি হয়েছিল তা আজও সঠিকভাবে কেউ বলতে পারিনি । ধারণা করা হয় জৈনিক চীনের পরিব্রাজক পিং নামের এক ব্যবসায়ীর নামে পিং না নামের উৎপত্তি হয়েছে । কেউ কেউ ধারণা করেন পিঙ্গলা শব্দের অপভ্রংশ হবে বলেই পিং না শব্দের উৎপত্তি । পিঙ্গল শব্দের অর্থ আগুনের মতো রং বা ফনিল বর্ণের অর্থাৎ পিত বর্ণের আভা যুক্ত রক্তবর্ণ পিঙ্গল শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ । পিঙ্গলা একটি অন্যতম নারী । এক কালে সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষিত হিন্দু সম্প্রদায়ের পণ্ডিতগণ এই রূপ নামকরণ করে থাকবেন । কালের প্রবাহে এখানে আগত বিদেশি ব্যবসায়ী বিশেষ করে মাড়োয়ারি বণিক গন কর্তৃক হয়তো ইহা পিঙ্গলা থেকে পিং না রূপান্তরিত হয়েছে । এমনও হতে পারে পিঙ্গলা বর্ণের গাছপালা এখানে বেশি ছিল , অথবা পিঙ্গলা বর্ণের স্বর্ণ লতিকা গাছ গাছরা বেশি করে আবৃত করে রাখত সমগ্র গ্রামটিকে । পিঙ্গল বর্ণের দেখাতো বলে পিং না নামের নামকরণ হতে পারে ।
যেভাবেই নামের উৎপত্তি হোক না কেন পিং নার একটি ঐতিহ্য আছে । এটি ব্রিটিশ আমলে একটি থানা ছিল । উল্লেখ্য যে 1817 সালে টমাস প্লে গেম হাম যখন ভারতীয় উপমহাদেশে এর সর্ববৃহৎ জেলা ময়মনসিংহের কালেক্টর ছিলেন তখন এই জেলায় থানা সমূহ গঠন করা হয়। আঠারোশো 30 খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলার বারোটি এবং আঠারোশো 62 খ্রিস্টাব্দে 14 টি থানা গঠন করা হয় তন্মধ্যে পিং না
একটি থানা ছিল । আঠারোশো 45 খ্রিস্টাব্দে সিরাজগঞ্জ, পিং না, হাজিপুর ও শেরপুর থানা নিয়ে জামালপুর মহাকুমা গঠন করা হয় । কোন কোন সময় থানা ও এলাকা পরিবর্তন করা হয় । কেন্দুয়ার পরিবর্তে পিং নার নামকরণ করা হয় গোপালপুর এর পরিবর্তে নিকলী নামকরণ হয় কিশোরগঞ্জ এর পরিবর্তে । (ময়মনসিংহে ইতিহাস ও ঐতিহ্য আব্দুর রশিদ ও সাইদুর রহমান )
ঐতিহ্যবাহী পিংনার থানাকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য পিংনার কৃতিসন্তান মরহুম গোলাম হোসেন মিয়া অনেক চেষ্টা তদবির করেছেন ।পিংনা হাই স্কুলের শতবর্ষ পূর্তিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন এর আগমন উপলক্ষে থানা বাস্তবায়নের জোরালো ও গণ আন্দোলন এর সৃষ্টি হয়েছিল । পিং নাতে থানা চাই এই দাবীতে গণজাগরণের সৃষ্টি হয়েছিল কিন্তু দুঃখের বিষয় অজ্ঞাত কারণে থানা বাস্তবায়ন হয় নাই ।
পিং নাতে কোন মন্ত্রী এমপি না থাকার কারণে এই এলাকাটি বরাবরই উপেক্ষিত ও বঞ্চিত হচ্ছে । এই এলাকার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মরহুম সুজাত আলী বেঁচে থাকলে পিংনাতে থানা বাস্তবায়নের চেষ্টা করতেন ।
ইংরেজ আমলে পিংনাতে বড় বড় পাটের কুঠি ছিল ।পিংনাতে নদীবন্দর ছিল কলকাতা থেকে পিংনার সাথে নৌ যোগাযোগ ছিল । নদীপথে বড় বড় স্টিমার লঞ্চ ও বড় বড় নৌকা এই বন্দরে আসত ।
বর্তমানে পিংনা সুজাত আলী অনার্স কলেজ এর স্থানেই বড় বড় পাটের কুঠি ছিল । বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই ছিল মুন্সেফ কোট ও আদালত ভবন । যমুনার তীরে পিংনা ছিল একটি নদী বন্দর ও টাউন । পিংনার সাথে কলকাতা ও নারায়ণগঞ্জ এর সাথে সরাসরি যোগাযোগ ছিল । নৌপথে পিংনার
সাথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এই অঞ্চলের মানুষের সার্বিক জীবন ব্যবস্থা বদলে দিয়েছিল ।
যমুনার নৌপথে এ যোগাযোগ এর কারণে পাট ব্যবসায়ীদের পিংনার সীল এর কারণে মণপ্রতি পাটের দাম 8 টাকা বেশি পেত ।
আশেপাশের এলাকার লোকজন যমুনা ও পূর্বপাশের খরস্রোতা নামক ছোট নদী দিয়ে নৌ যোগাযোগ করতেন । অধিকাংশ রোগীদের নিয়ে ছোট নদী দিয়ে যাতায়াত করতেন । পার্শ্ববর্তী জগন্নাথগঞ্জ ঘাটে স্টিমার ও ফেরি চলাচল এবং ট্রেন চলাচলের জন্য বিখ্যাত ছিল জগন্নাথপুর ঘাট আজ বিলীন হয়ে গেছে বর্তমানে সড়কপথে ঢাকা- তারাকান্দি সড়ক যোগাযোগ প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে । ঐতিহ্যবাহী
পিংনা তে মহাকবি কায়কোবাদ পোস্টমাস্টার ছিলেন তিনি এখানে বসেই মহাশ্মশান কাব্যগ্রন্থটি রচনা করেন তার বিখ্যাত আযান কবিতা সেই সময়ে পাঠক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করে ।
বর্তমানে পিংনা হাই স্কুলের দক্ষিণ পাশে সীমানা দেয়াল ঘেঁষে ঐতিহ্যবাহী পিংনা পোস্ট অফিস ও টেলিগ্রাফ অফিস । মহাকবি কায়কোবাদ এই পোস্ট অফিসে পোস্টমাস্টার ছিলেন ।
তিনি মহাশ্মশান কাব্যগ্রন্থ ও আজান কবিতা লিখে বিখ্যাত হয়েছিলেন । বাংলার মুসলমানদের তিনি জাগরণের বাণী শুনিয়েছিলেন ।
পরে নাকি মনে সেই অতীত গৌরব ?
সুদূর আরব ভূমি যেই বীর জাতি ,,,,,
কে ওই শোনাল মোরে আযানের ধ্বনি ,
মর্মে মর্মে সেই সুর বাজিল কি সুমধুর
আকুল হইল প্রাণ নাচিল ধমনী ।
পিংনার বিশিষ্ট বিদ্যুৎসাহী সমাজসেবক ব্যক্তি ছিলেন মরহুম এডভোকেট সুজাত আলী , তিনি সুজাত আলী অনার্স কলেজের প্রতিষ্ঠাতা । তিনি ঢাকাস্থ জামালপুর সমিতির সভাপতি ছিলেন বাংলাদেশ শিক্ষা প্রচার মিশনের সভাপতি ছিলেন । ফার্ম ভিউ সার্ভিসেস লিমিটেড এর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ছিলেন । বাসুরিয়া শামসুন্নাহার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন । সরিষাবাড়ী সমিতিসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন । এডভোকেট সুজাত আলী বেঁচে থাকলে পিংনার অনেক উন্নত হত এটাই এলাকার অভিজ্ঞ মহলের ধারণা ।
কলমে-
কামাল হোসেন মুসা
কবি ও সাংবাদিক
E-mil: dailyalokito71sangbad@gmail.com
তথ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত গণমাধ্যম দৈনিক আলোকিত ৭১ সংবাদ
@বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোক চিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বে-আইনি।
Copyright © 2024 alokito71sangbad. All rights reserved.