প্রতিনিধি ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ৬:০৭:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ
কনসক-ক্যাসপাস প্রতিনিধিঃ
?বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার জর্জ ক্যাম্বেল এর আমলে Madrasa Reforms committee এর অনুমোদনে মোহসিন ফান্ডের টাকায় ১৮৭৪ সালে কলকাতা আলিয়া মাদ্রসার মডেলে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে তিনটি নতুন মাদ্রাসা স্থাপন করা হয়। যদিও হাজী মোহাম্মদ মহসিনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নবপ্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাগুলোর নাম দেয়া হয় মহসিনিয়া মাদ্রাসা।
তথাপি ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা বহুল পরিচিতি লাভ করে ঢাকা মাদ্রাসা নামে। বৃটিশ শাসনামলে বাংলাদেশে এগুলো ছিল মুসলমানদের জন্য করা প্রথম সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।এর আগে ১৮৭৩ সালের জুলাই মাসে এক সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা মাদ্রাসার জন্য মহসিন ফান্ড থেকে বছরে দশ হাজার টাকার অনুদানের ব্যবস্থা করা হয়।
দীর্ঘ ৪২ বছর মহসিন ফান্ড থেকে ঢাকা মাদ্রাসার সমস্ত ব্যয় নির্বাহ করা হয়। ১৯১৫ সালের ১৬ নভেম্বর এক সরকারি আদেশে মাদ্রাসার ব্যয় ভার বহন করার দায়িত্ব বাঙলা সরকারের ওপর ন্যস্ত করা হয়। ১৮৮০ সালে প্রথম অধ্যক্ষ মওলানা ওবায়দুল্লাহ আল ওবায়দীর তত্ত্বাবধানে মুসলিম স্থাপত্যরীতি অনুযায়ী মাদ্রাসা ভবন তৈরি করা হয়।
এ ভবনের নকশা করে ছিলেন মেজর ম্যান। প্রকৌশলী ভিভিয়ান ও স্কট সেই নকশা অনুযায়ী নতুন ভবন তৈরি করেন। তাঁদেরকে এ কাজে সহায়তা করেছিলেন প্রকৌশলী রাখাল চন্দ্র দাস। মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠা লগ্নেই তিনি ইংরেজি ক্লাস খোলার ব্যবস্থা করেন এবং ইংরেজি বিভাগের (পরবর্তী এ্যাংলো-পারসিয়ান বিভাগ) প্রথম হেডমাস্টার ছিলেন বাবু রাজেন্দ্র মোহন দত্ত।
কলেজের প্রধান ভবনের উত্তরদিকের কাঠের সিঁড়ির ওপর তাঁর মৃত্যুর পর ছাত্রদের পক্ষ থেকে শ্বেতপাথরের ফলকে তাঁর নাম উৎকীর্ণ করে রাখা হয়েছে।মাদ্রাসায় সাতটি শ্রেণি ছিল। আরবি বিভাগে শুধু আরবি শিক্ষার্থীরা পড়ত। ইংরেজি বিভাগে (পরবর্তীতে এ্যাংলো পারসিয়ান বিভাগ) ইংরেজি শিক্ষার্থীরা পড়ত। এ বিভাগে এন্ট্রাস পর্যন্ত পড়ানো হত। এখান থেকে ছাত্ররা প্রথম ১৮৮১ সালে এন্ট্রাস পরীক্ষা দেয়। ইংরেজি বিভাগে আরবি ও ফারসির সঙ্গে ইংরেজি এবং পশ্চিমা সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান পড়ানো হতো।
কিছুদিনের মধ্যেই এ বিভাগ এতটা জনপ্রিয়তা লাভ করে যে, ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে মাদ্রাসার ৩৩৮ জন ছাত্রের মধ্যে ২০২ জন ছাত্রই ছিল এ্যাংলো পারসিয়ান বিভাগের। ১৯১৫ সালে সরকার কর্তৃক অন্যান্য মাদ্রাসার মতো নিউ স্কিম পদ্ধতির শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর প্রেক্ষিতে ঢাকা মাদ্রাসা হাই মাদ্রাসা হয়। ১৯১৬ সালে এ্যাংলো পারসিয়ান বিভাগ আলাদা হয়ে ঢাকা গভঃ মুসলিম হাই স্কুল হয়।
১৯১৯ সালে স্পেশাল ইসলামি ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা এবং ১৯২১ সালে স্পেশাল ইসলামিক ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষার প্রচলন হয়। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র ভর্তির সুবিধার্থে ১৯২৩ সালে এ প্রতিষ্ঠানকে ইসলামিক ইন্টারমেডিয়েট কলেজে রূপান্তরিত করা হয়। ১৯৪৭ সালে মাদ্রাসা বিভাগে ৪টি শ্রেণি ও কলেজ বিভাগে ২টি শ্রেণি ছিল।
১৯৫৭ সালে মানবিক ও ১৯৭০ সালে বিজ্ঞান বিভাগ খোলা হয়। ১৯৫৮ সালের জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সুপারিশে ১৯৬২ সালে মাদ্রাসা তুলে দিয়ে মাদ্রাসার ক্লাসগুলোকে মাধ্যমিক ক্লাসে পরিণত করা হয় এবং ঢাকা মাদ্রাসা পরিচিতি লাভ করে ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজের স্কুল বিভাগ হিসাবে।
এরপর ১৯৬৮ সালে কলেজ থেকে স্কুল আলাদা হয়ে গিয়ে নাম হয় ইসলামিয়া সরকারি হাই স্কুল, ঢাকা। কলেজের প্রধান ভবনের নিচতলায় উত্তর-পূর্বাংশের এই স্কুলেল কার্যক্রম এখনও চলছে। ১৯৬৮ সালে স্কুল আলাদা হয়ে যাবার পর কলেজের নামও পাল্টিয়ে রাখা হয় সরকারি ইসলামিয়া কলেজ, ঢাকা। ১৯৭২ সালে পুনরায় নাম পরিবর্তন করে ‘কবি নজরুল সরকারি কলেজ’ রাখা হয়।
অদ্যাবধি এ নামেই পরিচিত হয়ে আসছে।গ্রন্থাগারে বই-এর সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। কলেজের ১৭টি বিভাগে বর্তমানে ১০৯ জন (সংযুক্তিসহ) শিক্ষক কর্মরত আছেন। ১৯৭৪ সালে ১৬৯ জন ছাত্র নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ২১,০০০ জন।