প্রতিনিধি ২০ মার্চ ২০২২ , ৫:২১:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকার ঐতিহ্যবাহী একটি উদ্যান ‘বলধা গার্ডেন’। গাজীপুর জেলার সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়ন এর একটি গ্রাম হলো বলধা। সেই বলধার জমিদার বিশিষ্ট প্রকৃতি প্রেমিক ‘নরেন্দ্রনারায়ণ রায় চৌধুরী’ ব্যক্তিগত ভাবে ১৯০৯সনে ওয়ারী তে ৩.৩৮ একর জমির উপর এই বাগানটি করেন।তিনি নানান দেশ থেকে নানান প্রজাতির উদ্ভিদ নিয়ে এসে এই জায়গায় রোপন করতেন।এইভাবে গড়ে উঠে এই উদ্ভিদ উদ্যানটি।এখানে রয়েছে ৮০০ প্রজাতির প্রায় ১৮০০০ উদ্ভিদ।এই উদ্যানটি তিনি দুই ভাগে ভাগ করেন। এগুলো হলো সাইকী ও সিবলী।এই শব্দ গুলো গ্রীক পৌরাণিক শব্দ।যার বাংলা অর্থ যথাক্রমে আত্মা এবং প্রকৃতির দেবী।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ক্যামেলিয়া’ ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এখানের ‘জয় হাউজে’ বসে ‘ক্যামেলিয়া’ কবিতাটি লিখেন।এই উদ্যানের আরও অনেক ইতিহাস রয়েছে।
এই ঐতিহ্যবাহী পর্যটন কেন্দ্র দেখতে কার না মন চায়। আমিও চলে গেলাম কোন এক অবসর সময়ে। গেইটে যাওয়ার পর পরই দেখতে পেলাম এখানে একজন লোক বসে আছে মাছের খাবার নিয়ে।এই মাছের খাবার দিয়ে কি হবে চিন্তা করতে করতে ভিতরে প্রবেশ করলাম ।প্রবেশের পর পরই দেখতে পেলাম পুকুরের দুই প্রান্তের দুই ঘাটে বসে আছে দুই ঝাক তরুণ তরুণী।তাদের মধ্যে কারও গায়ে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পোষাক। হয়তো তারা তাদের ক্লাস শেষে মনের খোরাকের জন্য প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসেছে।
তারা মেতে আছে গান গল্প আর আড্ডায়।তাদের আনন্দঘন মুহূর্ত সময়ে বিরক্ত না করে সামনের দিকে হাটতে শুরু করলাম আর আমাদের আনন্দঘন মুহূর্তের স্মৃতি মনে আসতে শুরু করল।আমরা ও কোন এক সময় এইভাবে নানান জায়গায় ঘুরে বেড়াতাম।এই নিয়ে রয়েছে অনেক স্মৃতি।কোন একটা ছুটি কিংবা তাড়াতাড়ি ক্লাস শেষ হয়ে গেলে আমরা উড়ে বেড়াতাম নানান জায়গায় ।একটু সামনে যেতেই দেখতে পেলাম একটি বট গাছের মধ্যে ঝুলে আছে লম্বা রসির মতো গাছের শিকড়।
এটি দেখে আমার শৈশবের স্মৃতি মনে পরে গেল।একটু ঝুলার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম।চারদিকে শুধু সবুজের সমারোহ। একটু সামনে দেখতে পেলাম কয়েকটা ছোটছোট পুকুরের মতো। এইগুলোর মধ্যে রয়েছে কত গুলো পদ্ম পাতা।এখন এই পদ্ম কাননে যদি কিছু সংখ্যক রাজহাঁস থাকতো তাহলে কতই না ভাল লাগত।চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখে বসে পড়লাম একটা ইটপাথরের তৈরী একটি আসনে।এই দুপুরের রোদ যখন ঠিক মাথার উপর থেকে অত্যধিক তাপ দিতে থাকে কিন্তু এই চিড় সবুজের মাঝে তেমন গরম অনুভূত হয় না বরং এখানে আত্মার প্রশান্তি পাওয়া যায় ।
কিছুক্ষণ বসার পর এবার ঘাটে গিয়ে দেখলাম মাছ গুলো সব ভেসে বেড়াচ্ছে।একটি ছোট শিশু মাছ গুলাকে খাবার দিচ্ছে। মাছ গুলো খাবার খেয়ে চলে যাচ্ছে।বাবার ছোট্ট শিশুর আবদার একটি মাছ ধরে দেয়ার জন্য।কিন্তু কোন ভাবে সম্ভব হচ্ছে না।মাছ গুলো চলে যাচ্ছে।এই মুহূর্তটা শিশুটির জন্য খুবই আনন্দের।মাছের দৌড়ঝাঁপ যা চোখে পরার মতো ছিল এবং তা দেখে আনন্দে উচ্চাশিত হয়ে হাসছে আর লাফাচ্ছে শিশুটি।এই প্রাকৃতিক পরিবেশে শিশুদের নিয়ে আসলে তাদের মনের প্রশান্তি মিলে।
১৯৪৩ সনে জমিদার নরেন্দ্রনারায়ণ রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পর কোলকাতার হাইকোর্ট এর নিয়ন্ত্রণাধীন ট্রাস্ট এর মাধ্যমে বলধা বাগানের দেখাশোনা করা হয়।পরে ১৯৫১ সালে পাকিস্তান সরকার এর ‘কোর্ট অব ওয়ার্ডস’ এর দায়িত্বে থাকে কিন্তু বাগানের ব্যবস্থাপনায় বিন্দুমাত্র উন্নতি হয় নি।তাদের দুর্বল ব্যবস্থাপনায় বাগানের অবস্থার অবনতি ঘটে।১৯৬২ সালে এই বলধা বাগানের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য বনবিভাগকে এই বাগানের দায়িত্ব দেয়া হয়।এখন মিরপুরস্থ জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের একটি স্যাটেলাইট ইউনিট এই বলধা বাগান।
বর্তমানে ও ১৯৫১ সালের মতো অবস্থায় রয়েছে বলে মনে হয়। পদ্ম কাননে গিয়ে মনে হল পানির দুর্গন্ধ। হয়তো এই পংকজ কাননে কোন রাজহংস থাকলে সেটি আর বেচে থাকত না। এই পানির দুর্গন্ধের ফলে মারা যেতো।গাছের পাতায় পাতায় ধুলাবালির স্তর পরে আছে।পুকুরে মাছের সংখ্যা চোখে পরার মতো ছিল না।কিছু সংখ্যক কার্প আর ছোট ছোট তেলাপিয়া ছাড়া আর কিছু ছিল বলে মনে হয় না।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি শেয়ার করার ফলে কিছুসংখ্যক মন্তব্যে মনে হলো হয়তো ভুল বসত কোন এক নিষিদ্ধ পল্লীতে প্রবেশ করে ফেলেছি।
ব্যবস্থাপনায় যদি পরিবর্তন নিয়ে এসে এই বাগানটিকে দেয়ালে আবদ্ধ না রেখে অন্যকোন স্বচ্ছ কিছু দিয়ে বাগানটি আবৃত করা যায় তাহলে হয়তো এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পাবে।
ওবায়দুর রহমান
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ
কবি নজরুল সরকারি কলেজ