প্রতিনিধি ৫ নভেম্বর ২০২১ , ১১:৫৬:০৮ প্রিন্ট সংস্করণ
নিউজ ডেস্কঃ
ঢাকা উত্তর সিটির ৪৭নং ওয়ার্ডে মাটির মসজিদ সড়ক দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে সয়লাব। দীর্ঘদিন ধরেই চলছে এ দুর্ভোগ। বৃহস্পতিবার তোলা -যুগান্তর রাস্তা ও অলিগলির বেহাল অবস্থা। বৃষ্টি না হলেও সড়ক পানিতে সয়লাব। প্রতিনিয়ত ভাসে মলমূত্র, ময়লা-আবর্জনা। মাসের পর মাস রাস্তার এমন দশা।
সড়ক সংস্কারসহ পরিবেশ উন্নয়নে বাসিন্দাদের আকুতি শোনারও কেউ নেই। স্থানীয় প্রশাসনের কোনো ভ্রূক্ষেপ ও হুঁশ নেই। ওয়ার্ড কাউন্সিলরও নিরুপায়।
তিনি সব দেখলেও কোনো প্রতিকার করতে পারছেন না। এমন বক্তব্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফিরোজ-উর-রহমানের। অবশ্য শুধু ফিরোজ নন অধিকাংশ বাসিন্দার বক্তব্য এমনই।সরেজমিন ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড (ফায়দাবাদ, কোটবাড়ি, মৌশাইর, চালাবন, তুরাগ নদ পাড়) ঘুরে দেখা যায়, সংস্কারের অভাবে বেহাল পড়ে আছে ছোটবড় সড়ক, অলিগলি।রাস্তাজুড়ে অসংখ্য খানাখন্দ। পানি জমে কোনো কোনো সড়ক প্রায় ডোবায় পরিণত হয়েছে।
কোথাও বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে পড়ে সাইকেল, রিকশা, অটোরিকশা উলটে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। এ সড়কে যাতায়াত করাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে।এছাড়া রাস্তার পাশে জমি ও খালি জায়গায় দিনের পর দিন পানি জমে আছে। কোথাও পশু-পাখি মরে আছে। তাতে পোকামাকড়-মাছি ভনভন করছে। মলমূত্র ও নোংরা পানি দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এমন রাস্তার পাশেই বাসাবাড়ি, দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা-প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল-ক্লিনিক রয়েছে। এ ওয়ার্ডের কোনো সড়কে ন্যূনতম স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা নেই।
সংসদীয় ঢাকা-১৮ আসন ও ডিএনসিসির (উত্তরা অঞ্চল-৭) আঞ্চলিক কার্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত ৪৭ নং ওয়ার্ডে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষের বসবাস। ৬২ হাজার ভোটারের ওয়ার্ডটি অনেকটাই অনুন্নত ও নাগরিক সেবাবঞ্চিত। বাসিন্দারা জানান- ৪৫, ৪৮, ৪৯ ও ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসাবাড়ি ও বৃষ্টির পানি ৪৭নং ওয়ার্ডে গড়ায়। এতে চালাবন থেকে তুরাগ নদ পাড় পর্যন্ত সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এলাকায় গ্যাসের তীব্র সংকট। দীর্ঘদিন ধরে এর কোনো সমাধান হচ্ছে না। পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ একেবারেই থাকে না। এলাকার হাটবাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় এখনও গ্রামীণ জনপদের প্রতিচ্ছবি।
হাজি সুক্কুর আলী বাড়ি থেকে ক্লাব মোড় পর্যন্ত রাস্তা ভেঙে একাকার হয়ে গেছে। ছোট-বড় গর্ত মিলিয়ে এ সড়ক যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সিএনজি পাম্প থেকে মুজিবুর মার্কেট রাস্তার করুণ অবস্থা। বৃষ্টি হলেই রাস্তার কোথাও কোথাও পানি থইথই করে। চালাবন থেকে মাটির মসজিদ সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। এখানকার রাস্তায় মাসের পর মাস মলমূত্র ভরা পানি জমে থাকে। নোংরা পানি কখনো বাসাবাড়ির আঙ্গিনায় আবার কখনো দোকানপাট ও বাজারে উঠে যায়। এখানে পয়ঃনিষ্কাশনসহ আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। রাস্তাগুলোয় নেই কোনো সড়ক বাতি। এখানে আজও গড়ে ওঠেনি খেলার মাঠ, সরকারি হাসপাতাল, সিটি করপোরেশন মার্কেট, কমিউনিটি সেন্টার ও শিশুপার্ক।
মাটির মসজিদ এলাকার ব্যবসায়ী আলম খান জানান, বৃষ্টি হলে পুরো রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যায়। কখনো কখনো দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে রাস্তা সয়লাব হয়ে যায়। কাদা আর কালচে পানিতে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়ায়। এ কারণে এখানকার মার্কেটে কোনো ক্রেতা আসে না। চালাবন থেকে তুরাগ নদ পাড় পর্যন্ত সড়কে ড্রেন এবং স্যুয়ারেজ না থাকায় রাস্তা ও রাস্তার দুই পাশে পানি জমে যায়। এরমধ্য দিয়ে যানবাহন চলাচল করায় ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়।
বাসিন্দারা জানান, তাদের আকুতি কেউ শোনে না। পরিবেশ খারাপ হওয়ায় ভাড়াটিয়া অন্যত্র চলে যাচ্ছে। বাড়িওয়ালারাও বাসাবাড়ি সংস্কার, মেরামত ও নতুন করে নির্মাণে আগ্রহ হারাচ্ছে। রাস্তার বেহাল দশায় নির্মাণসামগ্রী আনাও সম্ভব হয় না।
ডিএনসিসির ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোতালেব হোসেন যুগান্তরকে বলেন, এ ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতাই প্রধান সমস্যা। বৃষ্টি হলে অথবা না হলেও এ ওয়ার্ডের রাস্তায় পানি থইথই করে। চালাবন থেকে তুরাগ নদ পাড়সহ প্রায় অর্ধশতাধিক সড়কের বেহাল দশা দীর্ঘদিনের। তিনি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে রাস্তা মেরামত অথবা নতুন রাস্তা তৈরি করা না হলে এ সমস্যা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। তিনি বলেন, ড্রেন ও স্যুয়ারেজ নির্মাণ করা জরুরি। জলাবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, এ ওয়ার্ডে মাদক ব্যবসায়ী ও আসক্তদের উৎপাত রয়েছে। মাদক ব্যবসা নির্মূলে পুলিশ ও স্থানীয়রা কাজ করছে।