• Uncategorized

    ইউএনও তাহমিনা আক্তারের বিরুদ্ধে এমপি মোকাব্বির খানের সংবাদ সম্মেলন

      প্রতিনিধি ৩০ মে ২০২১ , ৩:৫৬:৪২ প্রিন্ট সংস্করণ

     

    সিলেট ২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনের সাংসদ ও গণফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা মোকাব্বির খান এবার তার নির্বাচনী এলাকা ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তারের বিরুদ্ধে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন।শনিবার ২৯ মে এম.পির সিলেটস্থ বাসভবনে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বহল আলোচিত এই নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা’র বিরুদ্ধে নানান দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা সহ নানান অভিযোগ উপস্থাপন করেন এবং তাকে দ্রুত প্রত্যাহারের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান ।
    নিম্নে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এম .পি মোকাব্বির খান যা বলেন,

    প্রিয় বন্ধুরা !
    জাতির বিবেক হিসেবে আপনারা গণমানুষের কল্যাণে নিজেদের নিবেদিত রেখেছেন। মানুষের সুখ-দুঃখ, সংকট, সমস্যা আপনারা সাহস ও দায়িত্বশীলতার সাথে তুলে ধরেন বলেই আমাদের মত রাজনীতিকরা দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারছি। আজ সারা বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারীতে বিপর্যস্ত। আমাদের জীবন যাত্রা আজ সংকটে, আমাদের অর্থনীতি আজ চরম অনিশ্চয়তার মুখে। তারপরও থেমে নেই আমাদের জীবন যাত্রা।

    আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, এই করোনা মহামারী পরিস্থিতি আমাদের স্বাস্থ্যখাতের ভয়াবহ দূর্নীতিকে উন্মোচিত করেছে। আর তাদের সর্বগ্রাসী দূর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট করতে গিয়ে সম্প্রতি ঢাকায় আপনাদেরই একজন সহকর্মী কতিপয় সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের হাতে লানচিত হয়েছেন, অপদস্ত হয়েছেন, জেল খেটেছেন। এটাই প্রথম বা একমাত্র ঘটনা নয়। আগে এমন করে অনেক সংবাদ কর্মী সত্য ও অনুসন্ধানী রিপোর্ট করতে গিয়ে লাি ত হয়েছেন, এমন কী জীবনও দিয়েছেন। তারপরও সংবাদ কর্মীদের কলম থেমে নেই। সত্য প্রকাশে আপনাদের এই দৃঢ় ও সাহসী ভূমিকার জন্য আমরা সব সময়ই আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

    সাংবাদিক বন্ধুগণ !
    আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, বাংলাদেশের কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ি, দূর্নীতিবাজ আমলা ও অসৎ রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটগুলো কর্তৃক লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের ঘটনা উদঘাটন এবং দেশ ও জাতির শত্রু এই সব দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমি মহান জাতীয় সংসদে ক্রমাগতভাবে দাবী জানিয়ে আসছি। মহান সংসদে আমি একা এই দাবিতে সোচ্চার হলেও আমি জানি আমার মত এদেশের আপামর জনসাধারণও দূর্নীতিবাজদের শাস্তি চান।

    বন্ধুগণ !
    আপনারাও একমত হবেন যে, বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানের মত আমার নির্বাচনী এলাকায়ও রয়েছে দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। উদাহরণ হিসেবে বলতে চাই, দুর্নীতিবাজ সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের সহযোগিতায় একটি চক্র দীর্ঘ দিন ধরে আমার নির্বাচনী এলাকার কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছিলো। কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দেয় এবং আশেপাশে বাড়িঘর, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছিলো। বিষয়টি আমার নজরে আসলে আমি সাথে সাথে এই ব্যাপারে আশু প্রতিকার চেয়ে ভূমি মন্ত্রণলায়ের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়কে একটি ডিও লেটার পাঠাই। কিন্তু মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কোনরূপ ব্যবস্থা নিতে আগ্রহ না দেখালে আমি বিষয়টি মহান সংসদে উত্থাপন করি। যার ফলশ্রুতিতে সংশ্লিষ্ট মহলের টনক নড়ে এবং কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ হয়। রক্ষা পায় অসংখ্য মানুষের বাড়িঘর, সহায় সম্পদ।

    প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা !
    সরকার দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ এবং কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। যেখানে বিনামূল্যে জমি পাওয়া যাবে না, সেখানে তিন গুণ বেশি টাকা দিয়ে জমি অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আমার সংসদীয় এলাকায় এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য বিনামূল্যে জমি দেয়ার আগ্রহ থাকা সত্বেও ওসমানী নগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তারের সক্রিয় সহযোগিতায় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট জমি অধিগ্রহণের নামে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার সব ব্যবস্থা পাকা করে ফেলেছিলো বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি প্রমাণ সহ আমার নজরে আসলে আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ডিও লেটার পাঠাই এবং মহান জাতীয় সংসদেও বিষয়টি উত্থাপন করি। একইভাবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য স্থান নির্ধারণের ক্ষেত্রেও ওসমানী নগরের নির্বাহী কর্মকর্তা সরকারী বিধিবিধান উপেক্ষা করে সিন্ডিকেটের স্বার্থে কাজ করে আর্থিক মুনাফা অর্জনে সচেষ্ট রয়েছেন।

    উপজেলার এই সব কাজের ব্যাপারে জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে আমার সাথে পরামর্শ করার নির্দেশ থাকা সত্বেও তিনি তা অবজ্ঞা করে যাচ্ছেন। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়েও তিনি জনগণের স্বার্থকে উপেক্ষা করে নিজের ও সিন্ডিকেটের স্বার্থকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। এসকল অভিযোগের স্বপক্ষে আমাদের কাছে যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ রয়েছে।এই নির্বাহী কর্মকর্তার যোগসাজশে সম্প্রতি ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজারে টিসিবির পণ্য বাজারমূল্যে খোলা বাজারে বিক্রি হওয়ার কথাও আপনাদের অজানা থাকার কথা নয়। এধরনের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে।

    তাছাড়া, আমার মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক টিআর/কাবিটা প্রকল্পের কাজ যারা ১০০% সম্পন্ন করেছেন, তাদের কাছ থেকে ১০-১৫% টাকা পকেটস্থ করারও অভিযোগ রয়েছে এই নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। যারা তার দাবি অনুযায়ি ১০/১৫% টাকা দিচ্ছেন না, তাদের বিল আটকে রেখে নানাভাবে হয়রানী করে যাচ্ছেন। এ ধরনের অন্যায় চাপে বাধ্য হয়ে অনেকেই দাবী অনুযায়ি পারসেন্টেজ দিয়ে যাচ্ছেন। এসব দূর্নীতির সাক্ষ্য-প্রমাণ সময়মত কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করা হবে। প্রজাতন্ত্রের এই কর্মচারী প্রতিটি ক্ষেত্রে এমন কিছু সিন্ডিকেট সৃষ্টি করে রেখেছেন, যাদের দৌরাত্ম্যে আমার নির্বাচনী এলাকার সাধারণ জনগণ সরকারী সেবা ও সহায়তা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একজন দুর্নীতিবাজ সরকারী কর্মকর্তার কারণে রাষ্ট্রের মালিক জনগণের সাংবিধানিক অধিকার এমনভাবে ক্ষুন্ন হতে দেয়া যায়না।

    আমি মনে করি, এ ধরনের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে যেমন যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে, তেমিন জনগণকেও তাদের অধিকার রক্ষায় সচেতন ও সচেষ্ট হতে হবে। কথিত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যথাযথ বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে যাচ্ছি এবং আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায় এবং তাদের কাছে সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচির শতভাগ সুফল পৌঁছে দেয়ার স্বার্থে প্রয়োজনে আমি এসব দুর্নীতিবাজ কর্মচারী ও তাদের দোসর সিন্ডিকেটের কর্মকান্ডের কথা প্রমাণাদি সহ মহান সংসদ তুলে ধরবো।
    ওসমানী নগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত দূর্নীতির অভিযোগগুলো আমি উর্ধ্বতন কর্তৃক্ষের সামনে তুলে ধরায়।

    তিনি এবং তার দোসর বিশেষ সুবিধাভোগী চক্রটি আমার উপর রুষ্ট হয়। তারা একজন সংসদ সদস্যের বিশেষ মর্যাদা ও অধিকার ক্ষুন্ন করতে এখন পদে পদে বাধার সৃষ্টি করে চলেছে এবং নানাভাবে অপদস্ত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের এই অপচেষ্টা কোন একজন ব্যক্তি বা একজন এমপির বিরুদ্ধে নয়, এটি একজন জনপ্রতিনিধির নির্বাচকমন্ডলী অর্থাৎ সংসদীয় এলাকার জনগণকেই অপদস্ত করা এবং মহান জাতীয় সংসদকেই অপমান করার সামিল ।

    প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ ! আপনারা সব সময়ই জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন। সাধারণ মানুষের ভরসার স্থল হচ্ছেন আপনারা। আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণের স্বার্থে দুর্নীতিবাজ সরকারী কর্মকর্তা আর তাদের দোসর সিন্ডিকেটগুলোর বিরুদ্ধে আপনাদের কলম যেন সর্বদা সোচ্চার থাকে। আমি আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।আবারও আপনাদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ