প্রতিনিধি ২৪ অক্টোবর ২০২১ , ৪:১১:৩৪ প্রিন্ট সংস্করণ
নিউজ ডেস্কঃ
রাজধানীর মিরপুর ১৪ নম্বর এলাকায় যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন রিকশাচালক জহির উদ্দিন। ঢাকায় ৫ বছর ধরে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। ৩ ছেলেমেয়ে, স্ত্রী ও বৃদ্ধ মা সহ মোট ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে থাকেন ভাষানটেক এলাকায়। স্বল্প আয়ে কোনোমতো চলে জহিরের পরিবার। এরপরও স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে সুখেই আছেন বলে দাবি জহিরের। শুধু দুশ্চিন্তার কারণ নাকি নিত্যপণ্যের দামে। চাল, তেল সহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে কপালে ভাঁজ পড়েছে জহিরের। শুধু জহির নন, দেশের সব স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের একই হাল।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে এখন দিশাহারা সব কর্মজীবী মানুষেরা। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য না থাকায় শহরে যেন টিকে থাকা দায় মধ্যবিত্তদেরও। রাজধানীর বেশ কয়েকজন কর্মজীবী মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে।
৩ বছর যাবৎ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন হাসান মাহমুদ। তার ভাষ্যমতে, ৩ বছর ধরে চাকরি করলেও মাত্র এক দফা বেতন বেড়েছে। কিন্তু করোনার কারণে আর কোনো ধরনের ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়েনি তার। ১৮ হাজার টাকায় চাকরি শুরু করলে ৫ মাস পর ১ হাজার বাড়িয়ে ১৯ হাজার করা হয়।
৩ বছর পর তার আয়ের পরিমাণ একই থাকলেও ব্যয়ের পরিধি বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। তিনি বলেন, আগে মিরপুর এলাকায় ব্যাচেলর ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতাম। তখন মাসে ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হয়ে যেতো। কিন্তু গত বছর বিয়ে করে স্ত্রীকে নিয়ে এক বড় ভাইয়ের ভাড়া নেয়া ফ্ল্যাটে সাবলেট থাকি। এখন সব মিলিয়ে আমার খরচ প্রায় ১৫ হাজার টাকার মতো। আর বেতন মাত্র ১৯ হাজার টাকা। খরচ হয়তো এত হতো না যদি জিনিসপত্রের দাম না বাড়তো। তিনি বলেন, গত ১-২ বছরের তুলনায় সব নিত্যপণ্যের দাম প্রায় ডাবল বেড়ে গেছে।
সে জন্য থাকা-খাওয়ার খরচও বেড়েছে। কিন্তু আমার বেতন তো বাড়ে নাই। ৩ বছর ধরে সেই একই বেতনে চাকরি করছি। অথচ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলছে। সেকারণে যা বেতন পাই তার সবটাই থাকা-খাওয়ার খরচে চলে যায়। ভবিষ্যতের জন্য যে কিছু সঞ্চয় করবো তার কোনো উপায় নাই।রিকশাচালক জহির উদ্দিন বলেন, কয়েক বছর হলো ঢাকায় রিকশা চালাই। আর আমার বউ বাসাবাড়িতে রান্নার কাম করে। দুইজনের আয়ে আমগো চাহিদামতো এতদিন ধইরা মোটামুটি চলতাছি। আগের তুলনায় আয়-রোজগারও কিছুটা বাড়ছে।
কিন্তু এখনকার জিনিসপত্রের দামের সঙ্গে তুলনা করলে আমগো আয়-রোজগার আরও ডাবল বাড়ার কথা আছিল। কিন্তু আমগো রিকশা ভাড়া তো বাড়ে নাই। কিন্তু চাল, ডাল, তেলসহ সব জিনিসপত্রের দাম ঠিকই বাড়ে। যা আয়- রোজগার করি তা দিয়ে এখন সংসার চালানো কঠিন। জহির বলেন, এক মাস ধইরা ভালো কোনো মাছ কিংবা মাংস কিনতে পারি নাই। পোলা মাইয়া খাইতে চাইলেও কিইন্না দিতে পারি নাই। মাছ, মাংস এখন বড় লোকগো খাওন। আমরা খালি সবজি খাই। সবজির দামও এখন বেশি। ভালো সবজি খাইতে পারি না।
আলু ভর্তা আর ডাইল হইলো আমগো আসল খাওন। তাও এইডার দামও দেহি মাঝেমধ্যে বাইড়্যা যায়।নিত্যপণ্যের বাজারের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ভোজ্য তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন জানায়, এখন থেকে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৩৬ টাকা এবং বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬০ টাকায় বিক্রি হবে। এতদিন খোলা সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ১২৯ টাকা এবং বোতলজাত তেল ১৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।
অর্থাৎ দাম আরও ৭ টাকা বাড়লো। এর আগে গত ৫ই সেপ্টেম্বর ভোজ্য তেলের দাম বাড়াতে মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। সেই সময় সয়াবিন তেলের দাম না বাড়লেও পাম তেলের দাম প্রতি লিটার ১১২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬০ টাকার ঘোষণা এসেছিল। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাতে খোলা বাজার ও মুদি দোকানগুলোতে নির্ধারিত দামের চেয়ে বাড়িয়েই বিক্রি হচ্ছিল সয়াবিন তেল।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি’র বাজারদরের তথ্যে দেখা যায়, বর্তমানে খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একই মানের তেল গত বছর বিক্রি হয়েছে লিটারে ৯০ থেকে ৯৩ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ। সয়াবিনের ১ লিটারের বোতল বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। একই তেল গত বছর ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা লিটারে। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৪৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। পাম তেল মান ভেদে গতকাল বিক্রি হচ্ছে লিটারে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। একই মানের তেল গত বছর ছিল ৭৮ থেকে ৮৮ টাকা লিটারে। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৫৮ দশমিক ০৫ থেকে ৬১ দশমিক ৫৯ শতাংশ পর্যন্ত।
গত বছর সয়াবিন তেলের ৫ লিটারের বোতল বিক্রি হয়েছে ৪৭০ থেকে ৫২০ টাকা। সেই তেল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ থেকে ৭৩০ টাকায়। অর্থাৎ বছরে বেড়েছে ৪১ দশমিক ৪১ শতাংশ। একইভাবে চালের দাম বছরের ব্যবধানে বেড়েছে অন্তত ৮ শতাংশ, আটা-ময়দার দাম ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ, বিভিন্ন মানের ডালের দাম বেড়েছে অন্তত ১০ থেকে ২৬ শতাংশ, পিয়াজসহ বিভিন্ন মসলার দাম বেড়েছে অন্তত ১০ শতাংশ থেকে শুরু করে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত, বছরের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৩৮ শতাংশ, চিনির দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশ।