মো: মিশকাত হাওলাদার-বরগুনা জেলা প্রতিনিধি:
২৭ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মারা গেলেন ৫ আগষ্ট আগুনে দ্বগ্ধ স্কুল ছাত্র ইহতাশিমুল হক তেশাম (১৭)। গতকাল রবিবার ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাষ্টিক সার্জারী বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সোমবার সকালে ওই ছাত্রের মরদেহ তার গ্রামের বাড়ী আমতলী পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের সিকদার সড়কের পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়েছে। ছেলেকে হারিয়ে বাগরুদ্ধ প্রতিবন্ধি মা ইল্লিন বেগম ও বাবা রবিউল ইসলাম।
জানাগেছে, গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর আমতলী পৌরসভার মেয়র মতিয়ার রহমানের বাসায় আগুন দেয় এক দল দুর্বৃত্ত্বরা। এতে ওই বাসার দোতলায় আমতলী পৌর শহরের ১ নং ওয়ার্ডের সিকদার বাড়ী সড়কের বাসিন্দা আমতলী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেনীতে পড়ুয়া ছাত্র রবিউল ইসলামের ছেলে ইহতাশিমুল হক তেশাম আটকা পড়ে। প্রায় আড়াই ঘন্টা ওই ছাত্র মেয়রের বাসায় আটকে ছিল। এতে সে আগুনে দ্বগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয় ও স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেন। চার ঘন্টা ওই হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই হাসপাতালের বার্ন ও প্লাষ্টিক সার্জারী বিভাগে তিনি ২৭ দিন চিকিৎসারত ছিলেন। ২৭ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে রবিবার বেলা সোয়া ১১ টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের ছাড়া নেমে আসে। ছেলেকে হারিয়ে মা ইল্লিন বেগম ও ছোট দুই ভাই শেখ মোঃ আসাদুল্লাহ রায়হান ও শেখ হোসাইন আহম্মেদ ত্বোহা বাগরুদ্ধ হয়ে পরেছে।
তার মেঝ ভাই রায়হান আমতলী টেকনিক্যাল স্কুলে নবম শ্রেনীর ছাত্র ও ছোট ভাই ওয়াবদা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেনীতে পড়ে। রবিবার বিকেলে ইহতাশিমুল তেশামের জানাযা নামাজ ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন রাতে তেশামের মরদেহ গ্রামের বাড়ী আমতলী পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের সিকদার সড়কের বাড়ীতে নিয়ে আসে। সোমবার সকালে তার মরদেহের দ্বিতীয় জানাযা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। হতদরিদ্র ইহতাশিমুল হক তেশাম লেখাপড়ার পাশাপাশি বিদ্যুতের কাজ করতো। তার আয় দিয়েই চলতে মা ও তিন ভাইয়ের সংসার। তেশামের মৃত্যুতে দিশেহারা পরিবার।
প্রতিবেশী এ্যানি আক্তার বলেন, ইহতাশিমুল হক তেশাম খুল ভালো ছেলে ছিল। কিন্তু তার এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না। তেশাম লেখাপড়ার পাশাপাশি বিদ্যুতের কাজ করতো । ওই আয় দিয়েই চলতো পরিবারের ভরণ পোষণ। মেঝ ভাই শেখ মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ রায়হান বলেন, আমার ভাইকে দুবৃত্ত¡রা আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এ হত্যার বিচার আল্লাহ করবেন।
প্রতিবন্ধি মা ইল্লিন বেগম কান্নাজনিত কন্ঠে বলেন, মোর আর কিছুই রইল না। ক্যারে লইয়্যা মুই বাঁচমু। মোর পোলায় ল্যাহাপড়ার পর বিদ্যুতের কাম হরতো। তার আয় দিয়েই মোর সোংসার চালতো। এ্যাহন কি অইবে মুই কইতে পারিনা? বিলাপ করে আরো বলেন, ও আল্লাহ তোমার কি এমন ক্ষতি হরছিলাম মোর সোনার মানিকটাকে মোর কোল খালি হইর্যা লইয়্যা গ্যাছে? আমতলী থানার ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। ওই স্কুল ছাত্রের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
E-mil: dailyalokito71sangbad@gmail.com
তথ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত গণমাধ্যম দৈনিক আলোকিত ৭১ সংবাদ
@বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোক চিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বে-আইনি।
Copyright © 2024 alokito71sangbad. All rights reserved.