• আইন ও আদালত

    আত্রাই কলেজ অধ্যক্ষ মালেকের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

      প্রতিনিধি ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৮:৩১:৪০ প্রিন্ট সংস্করণ

    মোঃ মমিনুল ইসলাম মুন-বরেন্দ্র অঞ্চল প্রতিনিধি:

    রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী মোহনপুর উপজেলার আত্রাই অগ্রণী ডিগ্রী কলেজ অধ্যক্ষ আরসুজ্জামান ওরফে মালেকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। যদি ছোটখাটো চুরি হয় তাকে চুরি বলে, তার থেকে বড় হলে পুকুর চুরি, তার বড় হলে নদী চুরি,তার বড় হলে সাগর চুরি। কিন্তু যে চুরির সীমা-পরিসীমা নাই তাকে কি বলা হবে। এমনি চুরির ঘটনা ঘটেছে আত্রাই অগ্রণী ডিগ্রী কলেজে বলে মনে করছে স্থানীয় সুশীল সমাজ। অধ্যক্ষ আরসুজ্জামান মালেক কলেজের জমি নিজের দুই পুত্র এবং  লাইব্রেরিয়ানের নামেও লিখে দিয়েছেন। এ ছাড়াও এই অধ্যক্ষ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে সরকারি টাকা লোপাট করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

     
    অধ্যক্ষ আরসুজ্জামান মালেকের বিরুদ্ধে কলেজের সহকারী অধ্যাপক নাজমুল হক দেওয়ান রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ করার পর আরসুজ্জামান মালেক পদত্যাগ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। এদিকে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে সম্প্রতি অধ্যক্ষ আরসুজ্জামান মালেক একটি মামলার আসামি হয়েছেন। গত ২ সেপ্টেম্বর মোহনপুর সদরের নাহিদ পারভেজ নামের এক ব্যক্তি এই মামলা করেন। মামলার আসামি হওয়ার পর থেকে অধ্যক্ষ গা ঢাকা দিয়েছেন। কলেজের সহকারী অধ্যাপক নাজমুল হক দেওয়ান গত ২০ আগস্ট জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

    গত ২ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার বিষয়টি তদন্তের জন্য জৈষ্ঠ সহকারী কমিশনার শাহীন মিয়াকে দায়িত্ব দেন। এই তদন্ত শুরু হওয়ার পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর অধ্যক্ষ আরসুজ্জামান মালেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকার কারণে সুষ্ঠুভাবে কলেজ পরিচালনা করতে পারছেন না বলে তিনি পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেছেন। প্রায় ২৭ বছর ধরে কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে ছিলেন আরসুজ্জামান মালেক। পদত্যাগ করা এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কলেজের জমি দুই পুত্র ও লাইব্রেরিয়ানের নামে লিখে দেওয়া ছাড়াও আরও বেশ কিছু অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে।

    অভিযোগে বলা হয়েছে, তসলিম উদ্দিন ও শামিমা আকতার নামের কেউ কলেজে কখনো চাকরি করেননি। অথচ এ দুজনকে প্রভাষক নিয়োগ দেখিয়ে তাঁদের নামে আসা বেতন-ভাতা তুলে আত্মসাৎ করেছেন অধ্যক্ষ। তিনি একই ইনডেক্সে অবৈধভাবে একাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন তুলেছেন। অভিযোগপত্রে প্রমাণ হিসেবে এমপিও কপি সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, এমপিও কপিতে অধ্যক্ষ অবৈধভাবে শিক্ষক-কর্মচারীদের বিষয় পরিবর্তন করে প্যাটার্ন–বহির্ভূত নিয়োগ দিয়ে অনেক টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অধ্যক্ষ তাঁর ছেলে মাহমুদুজ্জামানকে নিয়োগ দিয়েছেন এ কলেজের শিক্ষক হিসেবে। অভিযোগে বলা হয়, মাহমুদুজ্জামান সমাজবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেছেন।

    কিন্তু তাঁকে কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর তিনি বেতন-ভাতা তুলছেন ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিংয়ের শিক্ষক হিসেবে। অধ্যক্ষের ছেলের নিয়োগের পুরোটিই ঘাপলা জালিয়াতি। অভিযোগে বলা হয়েছে, অধ্যক্ষ আরসুজ্জামানের জন্মতারিখ দুটি। প্রথম জন্মতারিখ অনুযায়ী ২০২০ সালেই তাঁর অবসরে যাওয়ার কথা। কিন্তু বেশি দিন চাকরিতে থাকতে তিনি দুটি জন্মতারিখ করেন। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো শিক্ষক পরপর দুই মেয়াদের বেশি গভর্নিং বডিতে শিক্ষক প্রতিনিধি থাকতে পারবেন না। কিন্তু অধ্যক্ষ তাঁর অনুগত সহকারী অধ্যাপক রহিমা খাতুনকে ২০১২ সাল থেকে এখনো পর্যন্ত শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে রাখেন। শিক্ষক-কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য অধ্যক্ষ অর্থ–বাণিজ্য করেছেন বলেও অভিযোগে বলা হয়েছে। 

    অভিযোগপত্রের সঙ্গে জমি বিক্রির দলিল এবং নিরীক্ষা আপত্তির কাগজপত্রও সংযুক্ত করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ২০০০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর পুত্র এম মাহমুদুজ্জামান সুমন ও এম মাহবুবুজ্জামান জয়ের নামে কলেজের শূন্য দশমিক ৭৪ শতক জমি দলিল করে দিয়েছেন অধ্যক্ষ আরসুজ্জামান। বিক্রয় কবলা দলিলে জমির মূল্য ধরা হয়েছে দেড় লাখ টাকা। শিক্ষকদের অভিযোগ, নামমাত্র মূল্য দেখিয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকার এ জমি পুত্রদের নামে লিখে দেন অধ্যক্ষ। দলিল করার সময় অধ্যক্ষের এক পুত্র নাবালক ছিল বলেও শিক্ষকদের অভিযোগ। এদিকে কলেজটিতে ২০১৪ সালের ২ মার্চ নিরীক্ষা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর। পরে উপ-পরিচালক দেবদুলাল ভট্টাচার্যের দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৭টি দলিলে কলেজের মোট জমির পরিমাণ দাবি করা হয় ২ দশমিক ৭৮ একর।

    কিন্তু নিরীক্ষায় দেখা গেছে, মাত্র তিনটি দলিলে জমির পরিমাণ ১ দশমিক ২৫ একর। প্রতিষ্ঠানের জমি বিক্রি করতে হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন প্রয়োজন। কিন্তু কোনো অনুমোদন নেননি অধ্যক্ষ। তিনি গভর্নিং বডির ওপর দায় চাপিয়ে বিষয়টি এড়ানোর চেষ্টা করেছেন। সরকারি বিধিবিধান প্রতিপালন না করার জন্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয় ওই প্রতিবেদনে। তারপরও এত দিন বহাল ছিলেন অধ্যক্ষ। অভিযোগকারী শিক্ষক নাজমুল হক দেওয়ান বলেন, ‘স্থানীয় বিদ্যানুরাগী মানুষ কলেজকে জমি দান করেছিলেন। সে জমি ছেলেদের নামে লিখে দিয়েছেন অধ্যক্ষ। চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে ছেলেকে চাকরিও দেন। তাঁর অনিয়মের শেষ নেই। আমরা অধ্যক্ষের সব অপকর্মের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
     
    অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্যের জন্য অধ্যক্ষ আরসাজ্জুমানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হয়। মামলার আসামি হওয়ায় তিনি আত্মগোপনের থাকার কারণে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর পুত্র ওই কলেজের শিক্ষক মাহমুদুজ্জামানকেও ফোন দিলে তিনিও ধরেননি। সাড়া দেননি এসএমএস দিলেও। অধ্যক্ষের অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার শাহিন মিয়া বলেন, ‘বিষয়টি তদন্তাধীন। অভিযোগকারী এবং অধ্যক্ষকে আগামী বুধবার ডাকা হয়েছে। অধ্যক্ষ মামলার আসামির কারণে আত্মগোপনে রয়েছেন কি না তা আমার জানা নেই। তিনি না এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ