প্রতিনিধি ৯ অক্টোবর ২০২২ , ৪:০৮:৫১ প্রিন্ট সংস্করণ
মোঃ ইব্রাহীম মাহমুদ-ঢাকা:
হারিয়ে যাচ্ছে হাতের লেখা চিঠি,সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কত কিছুই হারিয়ে যায়। হারানোর তালিকায় মানুষ নিজেই। সভ্যতার সূচনালগ্নে মানুষের কাছে যোগাযোগব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কিন্তু তখনো বিজ্ঞানের উত্তরণ শুরু হয়নি। যোগাযোগের জন্য মানুষ কত পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। কবুতরও ছিল যোগাযোগের মাধ্যম। এভাবে প্রতিনিয়তই মানুষ যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন করেছে। একসময় আসে চিঠির যুগ। হাতে লেখা চিঠি। মানুষের আবেগ প্রকাশের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। ডাকবাক্স, ডাকঘর, ডাকপিয়ন বা ডাকহরকরা এবং তাদের বিলি করা চিঠি এস শব্দ আজকের যুগে খুব প্রয়োজনীয় না হলেও একসময় মানুষের যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। দিনের পর দিন অপেক্ষা করে থেকেছে ডাকপিয়নের জন্য। তার সাইকেলের শব্দের জন্য। একটি এলাকায় সবচেয়ে পরিচিত ছিল এসব ডাকাপিয়নরা।
তখন বাজারে প্রচুর রাইটিং প্যাড ও চিঠি লেখার প্যাড পাওয়া যেতো। রঙ-বেরঙের হরেক রকমের প্যাডে প্রিয়জনের কাছে সুস্পষ্ট হরফে বিভিন্ন কালি বা কলমের মাধ্যমে চিঠি লেখা হতো। আবার চিঠিটা লিখে আঠা দিয়ে খামের মুখটা বন্ধ করে তাতে স্ট্যাম্প সেঁটে, বহুদূর হেঁটে গিয়ে ডাকবাক্সে বা ডাকঘরে চিঠি নিয়ে যেতে হতো। প্রেম ও ভালোবাসার ক্ষেত্রে যদি প্রেমের ব্যর্থতা আসতো, সেক্ষেত্রে চিঠি দিয়ে অনুভূতিগুলোকে প্রকাশ করতেন। কোনও কোনও চিঠি পড়ে হৃদয় জুড়িয়ে যেত, এতটাই স্পর্শকাতর ছিল সেসব চিঠির ভাষা। চিঠির জন্য দিনের পর দিন ডাক পিয়নের প্রতীক্ষায় থাকত মানুষেরা। কখন পিয়ন এসেই কাঙ্খিত চিঠিটি তার হাতে দেবে। চিঠি পেলেই মনের মধ্যে সে কী আনন্দ! সেই অনুভূতি ভাষায় লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়! সেই চিঠি পড়ে শেষ না করে উঠা যেত না।
ইন্টারনেটের এ যুগে কাগজ-কলমে লেখা চিঠির প্রচলন অনেক কমে গেলেও তা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। অনেক অফিসিয়াল চিঠি এখনও প্রতিদিন ডাক বিভাগের মাধ্যমেই আসে। তবে সেখানেও আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। তবে চিঠির জবাবের আশায় পথ চেয়ে বসে থাকা সেই সময়টুকুও আজ আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। স্বজন কিংবা বন্ধুর খবর পেতে এখন আর অপেক্ষায় থাকতে হয় না দিনের পর দিন। যেটা এক সময় হতো হাতের লেখা চিঠির জন্য। চিঠির স্থলে এসে গেছে ইন্টারনেট, মোবাইল-এসএমএস। যোগাযোগ মাধ্যমের এই পরিবর্তনে মানুষের জীবনযাত্রা এখন সহজ হয়ে গেলেও হারিয়ে যাচ্ছে হাতের লেখা চিঠি।